ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

সাটুরিয়ায় দুই দপ্তরের টানাটানিতে বন্ধ সেতুর নির্মাণকাজ

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
সাটুরিয়ায় দুই দপ্তরের টানাটানিতে বন্ধ সেতুর নির্মাণকাজ

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার রৌহা এলাকায় সেতু নির্মাণ নিয়ে এলজিইডি ও পিআইও দপ্তরের টানাটানিতে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ।

সেতু নির্মাণের জন্য পিআইও অফিস গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ২৭ লাখ ৮০ হাজার ২৫২ টাকা বরাদ্দ দেয়।

তবে রাস্তায় এলজিইডির কোর্ড পড়ায় ‘রাস্তা তুমি কার’ এ নিয়ে দুটি দপ্তরের টানাটানিতে বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণকাজ। বন্ধ থাকায় ভোগান্তির কবলে পড়েছে এলাকার জনগণ।  

জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন খালের ওপর নয়টি সেতু নির্মাণের অনুমোদন পান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে দরগ্রাম ইউনিয়নের রৌহা বাকপাড়া সড়কের খালের ওপর একটি নতুন সেতু হবে। সেখানে ৪০ বছরের পুরানো একটি সরু সেতু রয়েছে। সেই পুরোনো পরিত্যক্ত সেতু নিলাম করে অপসারণ করার জন্য মৌখিকভাবে এলজিইডি কর্মকর্তাকে বলা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। ওই পরিত্যক্ত সেতুটি অপসারণ না করে টালবাহানা করায় প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। রাস্তায় আমাদের কোড পড়েছে (৪০৬৪) আর সেতু নির্মাণ করলে আমাদের দপ্তর থেকে করবে এমনটাই দাবি উপজেলা এলজিইডি বিভাগের।  

দরগ্রামের রৌহা এলাকার ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি মো. হায়দার আলী বলেন, বাকপাড়া এই খালের ওপর ৪০ বছর আগে মানুষের চলাচলের জন্য ছোট একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কালের বিবর্তনে ওই সেতুটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। লোকমুখে শুনেছি এখানে নতুন করে একটি সেতু হবে কিন্তু সেটা নাকি আবার বন্ধও হয়ে যেতে বসেছে।  

ওই এলাকার আব্দুল্লাহ নামে আরও এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি বলেন, পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের জন্য মাপা হয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে বলে শুনেছি। এক দপ্তর বলছে সেতুটি আমার অন্য কেউ করতে পারবে না। আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের কথা হলো সেতু হবে সরকারি টাকায়, কারো পকেটের টাকায় সেতু হচ্ছে না। তবে কেন বাঁধা দিচ্ছে সেতু নির্মাণে, এখানে দুর্নীতি করতে না পারায় হয়ত বা সেতু নির্মাণে বাঁধা প্রয়োগ করছে বলেও আমাদের মনে হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্ট ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলীনূর বক্স রতন বলেন, বাকপাড়া খালের ওপর দীর্ঘ দিনের পুরোনো একটি সেতু আছে যা-কিনা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওই সেতুটি দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। বিধায় নতুন করে একটি সেতু করার প্রস্তাব করা হয় এবং সেটি পাশও হয়। এলজিইডি বিভাগের চাপের কারণে পিআইও অফিস সেতুটি নির্মাণ করতে পারছে না।  

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ করি এবং ডিএস, সিএস, এসএ ও আরএস পর্চায় সড়কের মালিক আমরা। আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের এক রেজুলেশনে আমরা যেকোনো সড়কের ওপর সেতু নির্মাণ করতে পারি এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এলজিইডি কর্মকর্তা কেন সেতু নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছে জানি না। নির্ধারিত সময়ের ভেতর সেতু নির্মাণ করতে না পারলে বরাদ্দকৃত ২৭ লাখ ৮০ হাজার ২৫২ টাকা ফেরত যাবে।  

অপরদিকে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা মো. ইমরুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেই রৌহা গ্রামের বাকপাড়া সড়কটি এলজিইডির কোড নম্বর পড়েছে। ফলে ওই সড়কের যা কিছু উন্নয়ন করা হবে তা এলজিইডি বিভাগ করবে। আর বাকপাড়া খালের ওপর সেতুর টেন্ডার আহ্বান করবে এলজিইডি বিভাগ। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কীভাবে এলজিইডির সড়কের ওপর নতুন সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করেন।  

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, দুটি দপ্তরের টানাপড়েনের জন্য সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। দুই অফিসকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করে সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।