ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

নীলফামারীর তৈজসপত্র যাচ্ছে বিদেশে, বছরে রপ্তানি ৩ লাখ ডলার

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫৯, মে ৬, ২০২৫
নীলফামারীর তৈজসপত্র যাচ্ছে বিদেশে, বছরে রপ্তানি ৩ লাখ ডলার নীলফামারী কারখানায় উৎপাদিত পণ্য। ছবি বাংলানিউজ

নীলফামারী: প্রতিবছর মাত্র একটি কারখানা থেকেই আড়াই থেকে তিন লাখ ডলারের তৈজসপত্র রপ্তানি করা হচ্ছে। এমনি একটি কারখানা রয়েছে নীলফামারীতে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত এ কারখানাটির নাম রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ।

ওই কারখানায় উৎপাদিত প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ননস্টিক ফ্লাইপ্যান, তৈজসপত্র, ব্লেন্ডার, ইনডাকশন চুলা, অ্যালুমিয়ামের বাসনপত্র, মগ-জগ ইত্যাদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে।  

নারী শ্রমিকদের হাতের তৈরি পোশাকের মতোই একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে, এদেশের তৈরি তৈজসপত্র শিল্প। দেশের একাধিক তৈজসপত্র কারখানা গড়ে উঠায় সেই সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলেছে।

সরজমিনে সৈয়দপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত কারখানাটিতে প্রচুর নারী শ্রমিক ও কারিগরদের কাজ করতে দেখা যায়। তারা কেউ স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্যাকেজিং করছিলেন। কেউ করছিলেন মেশিন পরিচালনা (অপারেট)। ব্লেন্ডারে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং এমনকি ভারী ভারী ডাইস মেশিনও পরিচালনা করতেও দেখা যায়।

কারখানার ব্লেন্ডার ইউনিটে মনিরা স্মৃতি (৩২) নামে এক নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। ওই ইউনিটে ৪৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৪৩ জনই নারী বলেন জানান তিনি। বাসটার্মিনালের পাশে আদানি মোড় এলাকার বাসিন্দা ওই নারী শ্রমিক সাত বছর ধরে কারখানাটিতে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, আমরা এ ইউনিটে একজন ফোরম্যানের অধীনে কাজ করি। চাকরির শুরুতে শিক্ষানবিশ হিসেবে এখানে যোগদান করি।  প্রথম ছয়মাস আমাকে কাজ শিখতে হয়েছে। আমরা একএকটি ব্লেন্ডার বানানোর পর তা মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগে পাঠিয়ে থাকি।

মেশিন অপারেটর খালেদা আকতার (৩৫) বলেন, এ কারখানায় নারী-পুরুষ বেতন বৈষম্য নেই। আমরা মূল বেতনের সঙ্গে কাজ অনুযায়ী ১০ ভাগ বোনাস পাই।

নারী শ্রমিক হাসিনা আক্তার বলেন, এ কারখানায় রংপুর ও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি নিজেও সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি এলাকা প্রতিদিন এসে কাজ করে থাকি। আমরা সবাই ৮ ঘণ্টা ডিউটি করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের কাজের সময় মাঝখানে খাবার বিরতি রয়েছে।

কারখানার রাইস কুকার ইউনিটে গেলে কথা হয় ফোরম্যান মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ কারখানায় মোট ১১০০ শ্রমিক রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০০ নারী কর্মী রয়েছে। তাদের হাতে তৈরি হচ্ছে নোয়াহ্ ব্রান্ডের প্রেসার কুকার, ননস্টিক তাওয়া, কড়াই, গ্যাসের ও ইনডাকশন চুলা, মাইক্রো ওভেন, ব্লেন্ডারসহ অনেক কিছু।  

কারখানার প্রোডাকশন ইনচার্জ সুলতান উদ্দিন বলেন, বাজারের তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের পণ্য গুণগত মান অনেক ভালো। কাজেই এসব পণ্যের বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, এখানো বাজারে অনেক নকল পণ্যে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। যা খুবই কম দামে বিক্রি হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। বাজার তদারকির জন্য তিনি জোর দাবি করেন।

কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, আমাদের কারখানাটি ১৯৭৯ সাল থেকে তৈজসপত্র তৈরি করে আসছে। অতীতে ভারতের আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রেস্টিজ, হাওকিংস এর প্রেসার কুকারসহ অন্যান্য তৈজসপত্র আমাদের বাজার দখল করেছিল। এখন আমাদের উৎপাদিত নোয়াহ্ ব্রান্ড ভারতের বাজারে যাচ্ছে। চাহিদা বেড়েছে নেপাল ও ভুটানেও। সরকার আগে এ খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি। তৈজসপত্র খাতটি প্রণোদনার আওতায় এলে এটিই হতে পারে দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত। যা গার্মেন্টস শিল্পের বিকল্প হতে পারে। আমরা ব্যাপক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তাদের হাত ধরেই এ রপ্তানি খাতটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে আশা করছি। প্রতিবছর কারখানা থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ ডলারের তৈজসপত্র রপ্তানি করে থাকি।

জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।