ঝালকাঠি: এক সময় ভবনটি ছিল সিনেমা হল। বাংলা ছায়াছবির পাশাপাশি অশ্লীল সিনেমাও প্রদর্শন হতো।
এভাবেই ঝালকাঠি শহরের প্রাণকেন্দ্র কালিবাড়ি রোডস্থ আমতলা মোড়ের উত্তরপূর্ব পাশের ‘মিতু’ নামের সিনেমা হল বেশ কয়েক বছর ধরে মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আসছে। বর্তমানে ভবনটি ‘খানকায়ে মুছলিহীন ঝালকাঠি’ ও ‘কায়েদ মহল’ নামে পরিচিত।
ঝালকাঠি শহরে তিনটি সিনেমা হল ছিল এক সময়। মিতু ছাড়াও পালবাড়ি এলাকায় ‘পলাশ’ ও লঞ্চঘাট এলাকায় ‘রূপালী’ নামক ২টি সিনেমা হল ছিল। দর্শকের অভাবে অনেক আগেই পলাশ ও রূপালী বন্ধ হয়ে যায়। তবে ‘মিতু’ -তে বাংলা ছায়াছবি প্রদর্শন চলছিল। শেষ পর্যায়ে কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল সিনেমাও দেখানো হতো বেশি টিকিট বিক্রির আশায়। যার অশালীন পোস্টারে সয়লাব থাকতো ঝালকাঠি শহর।
জানা যায়, বিষয়টি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসা ও ইসলামী কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আজিযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ সাহেব)। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, এই জায়গাটা একসময়ে নামাজের স্থান হবে। উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে। তার প্রায় দেড়যুগ পরে সেই কথা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
‘মিতু’ সিনেমা হলটি ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনের সময় বন্ধ হয়ে যায়। মূলত অশালীন সিনেমা প্রদর্শনের কারণে সুস্থধারার বিনোদনপ্রেমীরা সিনেমা হল বিমুখ হয়ে যান। হলটির মালিক ২০১১ সালে পৌর নির্বাচনের সময় বিক্রি করে দেন। পরে ক্রেতা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন ওই ভবনটিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং অন্য ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেন।
একপর্যায়ে মাওলানা কায়েদ সাহেবের ছেলে মাওলানা মুহা. খলিলুর রহমান নেছারাবাদী ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করে ভবনসহ জমিটি কিনে নেন। স্থাপনার অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন করে সেখানে একটি খানকাহ স্থাপন করেন। যার নাম দেওয়া হয় ‘কায়েদ মহল’। ওই সময় থেকেই আজান দিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায়, জিকির আসগারের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক তা’লিমি জলসা পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রমসহ ধর্মীয় বিষয়ের অনেক অনুষ্ঠান এখানে আয়োজন করা হচ্ছে।
আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব ডা. মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ খান বলেন, কায়েদ সাহেব হুজুর ছিলেন ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তি। মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও তাকে শ্রদ্ধা করেন। তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রত্যেকটাই ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সিনেমা হলটিতে এখন অশালীন ধ্বনির পরিবর্তে আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে, নামাজ আদায় হচ্ছে। যা তার একমাত্র ছেলে নেছারাবাদী হুজুরের দক্ষতায় সম্ভব হয়েছে।
মুসল্লি আরিফুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এখানে এই ‘মিতু’ সিনেমা হল। আমরা বন্ধুরা মিলে আসতাম এখানে সিনেমা দেখতে। কিন্তু কখনো ভাবিনি সেই সিনেমা হলটি একদিন আমাদের নামাজের স্থান হবে। আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত যে একসময়ের সিনেমা হলে এখন আমরা নামাজ আদায় করছি। এখানে অনেক দূর থেকেও মানুষ আসে নামাজ আদায় করতে। তারাও হয়তো কখনো ভাবেনি বিষয়টি। তাই আগ্রহ নিয়ে আসেন নামাজ আদায় করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
এসএএইচ