ঢাকা: মাছ আহরণ পরবর্তী পর্যায়ে সুষ্ঠু সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘাটতির কারণে আহরণোত্তর অপচয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৎস্য রপ্তানির হার এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ‘ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের শুভসূচনা কেবল একটি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর নয়, এটি একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতীক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত লাখো পরিবার ও জেলে সমাজের জীবনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল, বিশেষত বঙ্গোপসাগর এক বিশাল সম্ভাবনার আধার। একচেটিয়া অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার জলসীমা আমাদের হাতে থাকলেও এই বিশাল সম্পদ আহরণের সক্ষমতা এখনো সীমিত। এই অঞ্চলে রয়েছে ৪৭৫টিরও বেশি প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৩৬টির অধিক চিংড়ি প্রজাতি, উচ্চমানের শৈবাল, ওষুধ উপযোগী প্রাণী ও উপাদান এবং সম্ভাব্য গ্যাস ও খনিজ সম্পদ, যেগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সমুদ্র আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাই, তবে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদই হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। আজকের এই উদ্বোধনের মাধ্যমে সেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।
ফরিদা আখতার বলেন, এই কেন্দ্রের মাধ্যমে আধুনিক জেটি, পন্টুন, বরফ উৎপাদন ও সংরক্ষণাগার, পানি নিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও হাইজেনিক মাছ হ্যান্ডলিং সিস্টেম চালু করা হবে। এতে মাছের মান ও সতেজতা বজায় থাকবে, অপচয় হ্রাস পাবে এবং বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত হবে। ফলে জেলেদের শুধু আয়ই বাড়বে না, স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
জাইকা ও জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দীর্ঘদিন ধরে আপনারা সহযোগিতা করে আসছেন, বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও কৃষি খাতে। মৎস্য খাতেও আপনাদের অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) তোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি, জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদে, জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডিসি-এর পক্ষে ইয়াশিন আগা, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অনুরাধা ভদ্র, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নিজাম উদ্দিন আহমেদ। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন বিএফডিসির চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিএফডিসির কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা, মৎস্য ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
জিসিজি/এমজেএফ