ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা পাচার বন্ধে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ পাস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
টাকা পাচার বন্ধে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ পাস কথা বলছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ঢাকা: ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ পাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।



ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের বেশ কয়েকটা অধ্যাদেশ আমরা কতগুলো নীতিগতভাবে, কতগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছি। একটি হচ্ছে সরকারি হিসাব-নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, আরেকটা হচ্ছে ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ এবং গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশ। এই অধ্যাদেশগুলো নিয়ে আলোচনার সময় আমাদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম বা অর্থনৈতিক ক্রাইম যে গোষ্ঠীগুলো করেছে তাদের বিচার প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, প্রাথমিক কাজগুলো হয়েছে এখন ফিনান্সিয়াল ক্রাইমে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে আমরা তদন্তটা শুরু করার জন্য একটি আলাদা কমিটি করেছি।

তিনি বলেন, সরকারি হিসাব-নিরীক্ষা অধ্যাদেশ যেটা আছে সেটা ১৯৭৪ সালের একটা আইন ছিল সে আইনের অতিরিক্ত হিসাবে সম্পূরক হিসেবে এ আইনের আজকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এটার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অডিটিংয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কিছু স্ট্যান্ডার্ড আছে। সেই স্ট্যান্ডার্ড এবং প্র্যাকটিসগুলো যেন বাংলাদেশের কন্ট্রোলার এবং অডিটর জেনারেলরাও মেনে চলে সেটা নিশ্চিত করা, যাতে করে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যয় আমরা নিশ্চিত করতে পারি সেক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারি।

ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা শিল্প গোষ্ঠী কিভাবে কয়েকটা ব্যাংকের ওপর কিভাবে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে কত টাকা এদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তহবিল তসরুপ করা হয়েছে। ওই জিনিসটা ভবিষ্যতে যাতে আর না হতে পারে সেজন্য করপোরেট সেক্টরে, ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা আনার জন্য, জবাবদিহিতা আনার জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এ ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ আজকে আমরা পাস করেছি। আমরা আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনায় আমাদের সাধারণ আমানতকারীদের আর পরতে না হয়।  সেজন্যই এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কেমন করে আনয়ন করা হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হবে, কোনো পর্যায়ে গিয়ে ইন্টারভেন করবে এগুলো স্পষ্ট ছিল না এ আইনে, এখন এগুলো স্পষ্ট করা হলো। তিন নম্বর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, এটা কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটা রিকমেন্ডেশনের বেসিসে অর্ধ চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ২৬ মার্চ যখন ভাষণ দিয়েছিলেন তখন তিনি এ কথাটা বলেছিলেন যে, রেভিনিউয়ের ক্ষেত্রে পলিসি করা আর রেভিনিউয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা দুটো আলাদা এনটিটি হবে সেই মোতাবেক রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে আমরা দুইটা কাজকে আলাদা করছি, একটা কাজ হচ্ছে যারা রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন করবেন আর একটা কাজ হচ্ছে যারা এই নীতিটা বাস্তবায়ন করবেন। চতুর্থ আইনটা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশ। এখানে আগে যখন গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করতো একটা মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করতো। সে মূল্যবোধটা হচ্ছে যারা গ্রামীণ ব্যাংকের বেনিফিশিয়ারি তাদেরই সেট থাকবে এটা একটা পরিচালনার ক্ষেত্রে। কিন্তু আপনারা জানেন যে বিগত সময়ে, এখন আমাদের যিনি প্রধান উপদেষ্টা সেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা তার যে দর্শন ছিল, এটা যারা ঋণটা নেবে সেই বেনিফিশিয়ারির হাতেই থাকবে। সেখান থেকে সরিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই নিয়ে আসা হয়।

আজকে যে অর্ধ দেশটা সংশোধন করা হলো তার মাধ্যমে আগে গ্রামীণ ব্যাংক শুধুমাত্র ভূমিহীনদের জন্য কাজ করতো এখন বিত্তহীনদের একটা সঙ্গা সংযোজন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের হয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বোর্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যারা এটার বেনিফিশিয়ারি তাদের মধ্য থেকে নয়জন নির্বাচিত হয়ে আসবে, এই নয়জনের মধ্যে থেকে আবার তিনজন মনোনীত হবে এবং তাদের মধ্যে থেকেই একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। পরিশোধিত মূলধন আগে ছিল শতকরা ২৫ শতাংশ আর যারা বেনিফিশিয়ারি তারা ৭৫ পার্সেন্ট এখন হয়ে গেছে ১০ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ। গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের জনস্বার্থ সংস্থা ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট যেটা আছে ২০১৫ সেটা অনুযায়ী জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বিবেচেনা করার একটা বিধান আনা হয়েছে।

অধ্যাদেশ সংস্কারের ফলে একটা গোষ্ঠী সাত-আটটি ব্যাংকের মালিকানা নামে-বেনামে নিয়ে নিতো এখন সেটা কি বন্ধ হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা যাতে বন্ধ হয় সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বিস্তারিত হবে যখন বিধিমালা হবে তখন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৫
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।