ঢাকা: চিকিৎসা খাতের বৈষম্য দূর করতে চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত হাসপাতালটি পঞ্চগড় জেলায় স্থাপনের দাবি জানিয়েছে ওই জেলার মানুষ।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পঞ্চগড় জেলা সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে তারা বলেন, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে ও দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পঞ্চগড়। এ জেলার তিন দিকে ভারত এবং কাছেই নেপাল ও ভুটান অবস্থিত। এমন একটি কৌশলগত ও পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলায় স্বাধীনতার ৫ দশক অতিবাহিত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পঞ্চগড়ে বর্তমানে একটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল এবং কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত বেড সুবিধা, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ দক্ষ জনবল সংকটের ফলে জেলার প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষকে ন্যূনতম চিকিৎসার জন্য ছুটে যেতে হয় দিনাজপুর, নীলফামারী কিংবা রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে, যা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ।
তারা আরও বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হৃদরোগ, দুর্ঘটনা বা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের দিনাজপুর, রংপুর, ঢাকা অথবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই অপচয় হয় এবং অনেক সময় দূরত্বের কারণে জীবনহানিও ঘটে।
পঞ্চগড় একটি দূরবর্তী, প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত জেলা। যেখানে বর্তমানে বড় কোনো টারশিয়ারি হাসপাতাল নেই। এখানে এখনো বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা অনুপলব্ধ। এই প্রকল্প স্থানীয় জনগণের মধ্যে চীনের ইমেজকে উন্নত করবে। সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষকে শিলিগুড়ি, রংপুর বা ঢাকা পর্যন্ত যেতে হবে না। ঠাকুরগাঁও, পার্বতীপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার রোগীরাও উপকৃত হবেন। পঞ্চগড়ে ইতোমধ্যে ঢাকা-পঞ্চগড় রেললাইন এবং সংযোগ সড়ক উন্নত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে হাসপাতালের জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট ও রোগী পরিবহন সহজ হবে, এমনকি ভারতের কিছু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষও সহজেই চিকিৎসা নিতে আসতে পারবে।
১০০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাবে এবং সরকারি খরচ বাঁচাবে বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন পঞ্চগড়ে। সীমান্তবর্তী এলাকায় চীনা সরকারের সহযোগিতায় হাসপাতালে আপত্তি তোলে ভারত সরকার। ভারতকে খুশি করতে হাসপাতালটির কাজ বন্ধ করে দেয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তাহলে এখন চীনা সরকারের উপহার হাসপাতাল স্থাপনের জন্য পঞ্চগড়কে বাদ দিয়ে উত্তরবঙ্গের নতুন স্থান কেন খোঁজ করা হচ্ছে? অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আমাদের পঞ্চগড়ের মানুষকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবেন না। উত্তর বঙ্গের অবহেলিত জেলা পঞ্চগড়ের মানুষের সঠিক এবং ন্যায্য দাবি মেনে নিন।
মানববন্ধনে পঞ্চগড় জেলা সমিতির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান ফারুকী, সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ড. আব্দুর রহমান, জেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধানসহ জেলার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৫
ইএসএস/এসআইএস