পুলিশের হাতে আর মারণাস্ত্র থাকবে না, তাদের কাছে থাকা মারণাস্ত্র জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৯ম সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুলিশের হাতে যাতে আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে। এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে। কোনো মারণাস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। অস্ত্র থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের হাতে। তাদের কাজ কিন্তু অন্য পুলিশের থেকে একটু ভিন্ন।
কবে থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজকে কেবল মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তো একটু সময় লাগে।
পুলিশ যখন অপারেশনে যাবে তখন কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এপিবিএনের কাছে মারণাস্ত্র থাকবে। সাধারণ অপারেশনে তো মারণাস্ত্র দরকার নেই। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, এটা পুলিশের একটা উইং। পুলিশের কাছে রাইফেল থাকবে না, তা হয় না। তাদের কাছে রাইফেল থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে পুলিশকে মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি দেখবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আপনারা অবৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেখানে কতগুলো অস্ত্র জমা পড়েছে এবং শেখ হাসিনার সময়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালে কতগুলো অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান এখনও চলছে। তবে আমরা যে পরিমাণ আশা করেছিলাম, সে পরিমাণ উদ্ধার করতে পারিনি বা হয়নি। আর অবৈধ অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা এখন বলতে পারব না।
সীমান্ত দিয়ে প্রচুর গবাদিপশু বাংলাদেশে ঢুকছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সে বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশেই প্রচুর গবাদিপশু আছে, ফলে সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো ধরনের গবাদিপশু না ঢুকতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুই-একটা আসতে পারে, কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বা বিজিবির নজরে পড়েছে—এরকম কোনো কিছু আমরা হতে দিচ্ছি না।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, প্রজ্ঞাপনে যে ধরনের নির্দেশনা আছে, আমরা সেভাবেই কাজ করব। এ বিষয়ে সেদিন বিস্তারিত বলে দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আইন যেটা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের।
আওয়ামী লীগ তো সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে, তারা বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল, রাতের মিছিল করছে—এক্ষেত্রে আপনাদের কার্যক্রম কী হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যদি আমাদের আগে জানিয়ে দিতে পারেন তাহলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারব। আর গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যদি আমরা জানতে পারি তাহলেও আমরা ব্যবস্থা নেব।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিদেশ যাওয়া নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হয়েছে। কিন্তু তদন্তের আগে চারজন পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সাড়ে ৯০০ লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তাহলে তার পাসপোর্ট কেন বহাল রাখা হলো—এমন প্রশ্নের জবাব উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। আর তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রপতি, তার জন্য এটা প্রযোজ্য কি না, সেটা দেখতে হবে। তার কাছে এই পাসপোর্ট রাখা বৈধ ছিল নাকি অবৈধ ছিল, সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। রাষ্ট্রপতিরা কিন্তু কিছু কিছু সুযোগ সুবিধা পান। তাই প্রটোকলের বাইরে কিছু হয়েছে কি না, সেটা দেখা হবে।
জিসিজি/এমজেএফ