ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজের সংবাদে প্রাণ ফিরে পেলো সেই বধ্যভূমি!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
বাংলানিউজের সংবাদে প্রাণ ফিরে পেলো সেই বধ্যভূমি! বধ্যভূমি

জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো একাত্তরের শহীদদের স্মৃতির স্মারক বধ্যভূমি। রাজনৈতিক পোস্টারে ঢাকা পড়েছিল শহীদদের এ স্মৃতিস্তম্ভ। দুষ্টচক্র মুছে দিয়েছিল বধ্যভূমির নামফলকও। পাক হানাদার বাহিনীর...

ময়মনসিংহ: জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো একাত্তরের শহীদদের স্মৃতির স্মারক বধ্যভূমি। রাজনৈতিক পোস্টারে ঢাকা পড়েছিল শহীদদের এ স্মৃতিস্তম্ভ।

দুষ্টচক্র মুছে দিয়েছিল বধ্যভূমির নামফলকও। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের এ নীরব সাক্ষী নিদারুণ অযত্ন আর অবহেলায় ঠাহর করাও ছিল কষ্টের।  

ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদছোঁয়া শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানের সবুজ বেস্টনির মধ্যে দিনের পর দিন মুক্তিকামী বাঙালিদের ত্যাগের এ স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে নেওয়া হয়নি কার্যকরী কোনো উদ্যোগ। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেই দায় সেরেছিল সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিনের এমন বিবর্ণ চেহারা থেকে অবশেষে বেরিয়ে এসেছে পৈশাচিক গণহত্যার সাক্ষী এ বধ্যভূমি।  

করুণ দশা কাটিয়ে নতুন চেহারায় রীতিমতো প্রাণ ফিরে পেয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এ বধ্যভূমি। চারপাশ পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি বধ্যভূমিতে নতুন রং দেওয়া হয়েছে।  

মুছে যাওয়া নামফলকও পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এসব সম্ভব হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমানের কার্যকরী উদ্যোগে।  

দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’-এ গত ১৩ ডিসেম্বর ‘পোস্টারে আড়াল বধ্যভূমি, মুছে যাচ্ছে নামফলক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুকে বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।  

এরপর গত কয়েকদিন পৌরসভার কর্মীবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মদানকারী শহীদদের এ স্মৃতিস্তম্ভটির প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেন। ফলে এখন দূর থেকে সহজেই বধ্যভূমিটি শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।  

ঐতিহাসিক এ স্থানটি সংস্কার কাজের ফলে ময়মনসিংহের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের সময়োপযোগী এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমানের এ কর্মপ্রয়াস মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার মানুষকেও আবেগ উদ্দীপ্ত করেছে।

জানা যায়, নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করার এ স্থানটিতে ২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে বধ্যভূমি’র উদ্বোধন করা হয়। এর ৮ বছরের মাথায় বধ্যভূমির গণহত্যা ফলকের অনেক লেখাই মুছে যায়।

দুষ্টচক্রের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হয় উদ্বোধনের তারিখ ও উদ্বোধকের নামও। এদিকটায় কারো কোনো দৃষ্টি না থাকায় বঝার উপায় ছিল না, এটিই একাত্তরের চেতনা বিকাশের ঐতিহাসিক এক স্থান।  

শুধু তাই নয়, এ ফলকটি ক্ষত-বিক্ষত করে দেওয়ার পাশাপাশি তার ওপর কালো কালিতে একজনের নামও লিখে রাখা হয়েছিল। সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক দলের পোস্টারও।  

ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী মানুষদের এখানে ধরে এনে হত্যা করেছিল। বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় জেলা প্রশাসকের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।  

একই বিষয়ে প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এ যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে জীবন্ত করে রাখতে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এর নামফলকটিও পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬ 
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।