ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান পদ্মাসেতু

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান পদ্মাসেতু

মুন্সিগঞ্জ, পদ্মাসেতু এলাকা থেকে: পদ্মাসেতুর ২০তম স্প্যান ‘৩-এফ’ ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের উপর বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো তিন কিলোমিটার। বছরের শেষ দিনে ও বিজয়ের মাসে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলভাবেই স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। 

একের পর এক স্প্যান বসিয়ে এভাবেই স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ হচ্ছে। কাজ শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যে সেতুর সফল একটি বছর ২০১৯।

এই বছরেই ১৩টি স্প্যান বসানো হয়েছে পদ্মাসেতুতে।

ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ২১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে। ১৯তম স্প্যান বসানোর মাত্র ১৩ দিনের দিনের মাথায় বসেছে এ স্প্যানটি।  

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সাড়ে ১২টায় মাওয়ায় স্প্যান বসানো শেষ হয়। পদ্মাসেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

>>>আরও পড়ুন..বসছে পদ্মাসেতুর ২০তম স্প্যান, দৃশ্যমান হবে ৩ কিলোমিটার

এরআগে, সকাল সাড়ে ৯টায় ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেন বহন করে রওনা করে। সেতুর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছায় সকাল ১০টার দিকে।  

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ভাসমান ক্রেনটি নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। রাখা হয় দুই পিলারের বেয়ারিংয়ের উপর। এরপর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারে বসানো স্প্যানের সঙ্গে ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হবে। স্প্যান বসানোর জন্য উপযোগী সময় থাকায় এবং সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীরা অল্প সময়ের মধ্যেই স্প্যান বসাতে সক্ষম হন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়।  

স্প্যান বসানোর কাজ চলছে।  ছবি: বাংলানিউজ

প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৬পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ছয়টি পিলারের কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে। বর্তমানে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৩টি স্প্যান আছে। ২০টি স্প্যান পিলারের উপর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ছয়টি স্প্যান চীনে প্রস্তুত হয়ে আছে এবং দুইটি স্প্যান মাওয়ার পথে আছে। জানুয়ারি মাসে সেতুতে চারটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রকৌশলীদের।  

জানা যায়, পদ্মাসেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন। স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিলারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’।

পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।