ঢাকা, শুক্রবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২১ মার্চ ২০২৫, ২০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক ডিলুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২১
সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক ডিলুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

পাবনা (ঈশ্বরদী): উত্তরাঞ্চলের বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগের কান্ডারি ছিলেন পাবনা-৪ আসনের পরপর পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) বর্ষীয়ান প্রয়াত নেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিল, দোয়া, কবর জিয়ারত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০২০ সালের এই দিনে ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) বাদ জুম্মা থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে নিজ গ্রামের বাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলাদ মাহফিল দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে কোরআন খতম, কবর জিয়ারত করা হয়।  

দোয়া মাহফিলে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ ও আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।  

দোয়া মাহফিলে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী আটঘরিয়া ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের ১২ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ঈশ্বরদী শহরের আলিবর্দি সড়কের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।  

দোয়া মাহফিল শেষে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রীর সেজো ছেলে, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য, গালিবুর রহমান শরীফ ও ছোট ছেলে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল প্রয়াত বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।  

প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনৈতিক, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ১৯৪০ সালের ১০ মার্চ পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর শানিকদিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম জোবেদা খাতুন। তার শৈশব-কৈশোর কাটে ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডা গ্রামে। ডিলু লক্ষ্মীকুন্ডা ফ্রি প্রাইমারি স্কুল ও পাকুড়িয়া মিডল স্কুলে পড়াশোনো শেষ করে পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৬০ সালে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬২ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।  

ভারত বিভাগের পর নব্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবি জানায় ও আন্দোলন চালাতে থাকে। শামসুর রহমান শরীফ ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ভাষার দাবিতে মিছিল করায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে ও জেলে বন্দি রাখে। ১৯৫৯ সালে আইয়ূব খানের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়।  

১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গ্রেফতার হন। ১৯৬৭ সালে আবারও তিনি কারাবরণ করেন ছয় দফা আন্দোলনের প্রচার করতে গিয়ে। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাবনার মাধপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে তার বাহিনীর ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা গুলিতে মারা যায় এবং পাকিস্তানি সেনাদের অনেকেই ওই যুদ্ধে হতাহত হয়। তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে কাজীপাড়ায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড লিডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ভারতের জলঙ্গীতে তার ছিল।
 
রাজনৈতিক জীবনে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর প্রথম সাফল্য আসে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ক্রমান্নয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও পরে ২০০৬ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে মনোনীত হন। ২০১৪ সালে আবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।  

শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকারের আমলে টানা ৫ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন এবং সামরিক শাষক এরশাদ সরকারের আমলেও তাকে কারাবরণ করেন। সর্বপ্রথম তিনি ১৯৭৯ সালে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। পরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে পাবনা-৪ আসনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিববে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক মাঠে ময়দানে ‘ডিলু ভাই’ বলেই ডাকতেন সবাই।  

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের ক্ষমতায় গেলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেন। টানা ৫ বছর তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, ভারত, দুবাই ও অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সহধর্মিণী কামরুন্নাহার শরীফ একজন আদর্শ গৃহিণী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই মহীয়সী নারীর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তার ৫ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বর্তমানে ৪ ছেলে ৫ মেয়ে। সবাই সুশিক্ষিত। বর্তমানে তারা রাজনীতিতে সক্রিয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।