ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রলীগের অসহিষ্ণুতার দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
ছাত্রলীগের অসহিষ্ণুতার দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ

ঢাকা: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শিক্ষকরাও তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিক্ষার হচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, যেখানে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয়।

এ সব ঘটনায় শুধু ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সংগঠনের কমিটিতে থাকা নেতা-নেত্রীরাও গর্হিত এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এসব বেপরোয়া ঘটনায় ঐতিহাসিক সংগঠনটির পাশাপাশি সরকার এবং আওয়ামী লীগও সমালোচিত হচ্ছে। দলটির নেতারাও মনে করে ছাত্রলীগের কারণে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ফলে সংগঠনটির এসব কর্মকাণ্ডের দায় নিতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

ঘটনাক্রম:
দুদিন আগে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেত্রী ও তার সহযোগী কর্তৃক এক ছাত্রীকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) উচ্চ আদালত তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা হলেন- ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম।

২০২২ সালের আগস্টে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দুই ছাত্রীকে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে। এ ছাড়া আরও একটি বড় ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভিযুক্ত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে জোর করে আবাসিক হলের সিট দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগও পাওয়া যায়। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরিদউদ্দিন খান বৃহস্পতিবার থেকে অনশন করেছেন।

চলতি বছর ১০ জানুয়ারি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে ছাত্রলীগের শাখার সভাপতির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লাঞ্ছিত করে। ১১ জানুয়ারি এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের এক নেতা চট্টগ্রামের এক কলেজ শিক্ষিকাকে ক্লাসরুমেই লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। গত ৩০ জানুয়ারি কুমিল্লায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর হাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত লাঞ্ছিত হন।

দেশের আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ ধরণের ঘটিয়েছে। এসব তথ্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে আসে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করাও নয়, মারামারি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলেরও সিট দখলের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ওঠে অহরহ। নিজেদের মধ্যে বিবাদ-সংঘাত তো আছেই, অন্য দলের অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় ছাত্রলীগ। প্রায় প্রতিদিন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। আবার কোনো কোনো ঘটনা যাতে প্রকাশ না হয়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগীদের চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তথ্য গোপন রাখতে বাধ্য করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। তবে বাংলানিউজের কাছে ঘটনাগুলো নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন তিনি। ঘটনাগুলোর যাতে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের সাংগঠনিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগকে পরামর্শ দিতে চান তিনি।

আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন। জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে অন্যান্যরাও সাহস হারাবে বা নিজেদের সংশোধন করে নেবে বলেও তারা মনে করেন। কিন্তু সংগঠনের এহেন অপ-কর্মকাণ্ডের দায় দলের নয় বলেও মত দেন তারা।

নেতাদের ভাষ্য, ছাত্রলীগ যেহেতু আওয়ামী লীগের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নয়, সে কারণে তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় যেসব অভিযোগ আসে, সেগুলোও পুরোপুরি সত্য নয় বলে তারা বিশ্বাস করেন। ঢালাওভাবে আসা অভিযোগগুলো যাচাই করা দরকার বলে তারা মনে করেন।

ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারকদের অন্যতম এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, গণমাধ্যমেও দেখি, আমাদের কাছেও কিছু অভিযোগ আসে। যারা প্রকৃত অর্থে ছাত্রলীগ করে তারা অপকর্ম করতে পারে না বলে আমার বিশ্বাস। সংগঠন থেকে যারা এসব করছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আমরা দিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আবার যেভাবে ঢালাও অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আসে; সেটাও কতটুকু সঠিক দেখতে হবে। তাছাড়া ছাত্রলীগ কিন্তু আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন না , ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আমরা ছাত্রলীগকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না; জোর করে বলতে পারি না। আমরা তাদের পরামর্শ দিতে পারি। আমরা ছাত্রলীগকে বলেছি, এ সব অভিযোগ তদন্তে তারা কাজ করছে এটা আমি জানি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।