ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির আন্দোলন খেলা শেষ হয়ে গেছে: হানিফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
বিএনপির আন্দোলন খেলা শেষ হয়ে গেছে: হানিফ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ

ঢাকা: সরকার পতনের স্বপ্ন থেকে বিএনপি দূরে সরে গেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, সরকারের পতন ঘটানোর জন্য গত ১৪ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন করতে করতে তাদের আন্দোলন খেলা শেষ হয়ে গেছে। তারা (বিএনপি) ঝিমিয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকালে দেশ, উন্নয়ন, সরকার ও শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোট।

হানিফ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে এখন ১৫ বছরে পা দিয়েছে। এ ১৪ বছরে সরকার কি কাজ করেছে সেটা দেশবাসী জানে। কোথায় ছিল দেশ, আর এখন কোথায় আছে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা (বিএনপি) রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কি করবেন, তার থেকে আপনারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে কি করেছেন সেটি যদি বলতেন, তাহলে জাতি আপনাদের কথার ওপর ভরসা পেত, আস্থা পেত। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আপনারা তোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। আমি জানি এখানে আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকবে না।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বাংলাদেশের সবচেয়ে দুঃসময় ও ক্রান্তিকাল ছিল মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি) কোথায় রেখে গিয়েছিল বাংলাদেশকে। সরকারের মধ্যেও তখন সরকার ছিল। একদিকে সরকার প্রধান ছিলেন খালেদা জিয়া, আরেকদিকে হাওয়া ভবন বানিয়ে অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার ছেলে তারেক রহমান। রাষ্ট্রের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ সেখান থেকে হতো। বিশেষ করে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো।

বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুধু মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী নয়, অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে তখন হত্যা করা হয়েছিল। জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। এটাই ছিল বিএনপির রাষ্ট্র শাসন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। সে হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন, ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, বিএনপির আমলে বিবিসির অনলাইনে নিউজ বের হয়েছিল, বাংলাদেশে ১২৫টি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব আছে। অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সমস্ত জঙ্গি সংগঠনগুলো হাওয়া ভবন থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ। এ এশিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত মাফিয়া ডন হিসেবে চিহ্নিত দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে তারেক জিয়া দুবাইতে গিয়ে মিটিং করতো।

বিএনপি বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে দিয়ে গিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, কৃষি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা খাত থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে অধঃপতন ছিল। আজকে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট থেকে আজকে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। কৃষি খাতে আমাদের যে ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি ছিল, আজকে সে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে আজকে ৪ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টনের উপরে খাদ্য উৎপাদন সক্ষমতা আমাদের হয়েছে।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দেশের এ উন্নয়ন বিএনপি এবং জামায়াতের পছন্দ নয়। কারণ দেশের মাটি ও মানুষের সওঙ্গ এ দুইটি দলের সম্পর্ক নেই। ১৯৭১ এর পরাশক্তি পাকিস্তান থেকে এদের কলকাঠি নাড়ানো হয়৷ ওই সময় যারা পাকিস্তানের পক্ষে থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন, তারা এখনো পশ্চিমা দেশে থেকে কলকাঠি নাড়ে। এ সরকারের পতন ঘটানোর স্বপ্ন দেখে।

নতুন ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত পরশু পত্রিকায় দেখলাম আমাদের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ৪০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে খোলা চিঠি দিয়েছে। এত বড় বড় ব্যক্তি চিঠি দেবেন, সেটা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে দেখতে হবে কেন? এ চিঠি তো নিউইয়র্ক টাইম বা ওয়াশিংটন পোস্টের মতো সংবাদমাধ্যমে নিউজ হিসেবে আসার কথা ছিল। কিন্তু নিউজ হিসেবে আসেনি, এসেছে বিজ্ঞাপন আকারে। যা যে কেউ দিতে পারে। টাকা দিলেই এমন বিজ্ঞাপন ছাপানো যায়। এর দায় গণমাধ্যম নেয় না।

তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস, ড. ইউনূসের পক্ষে যাদের নামে এ খোলা চিঠি এসেছে, তারা কেউই এ চিঠি লেখেনি। এটা উনি (ড. ইউনূস) কল্পিতভাবে বানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে দিয়ে নতুন করে একটি ধোঁয়াসা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। কারণ এ চিঠির মধ্যে যেসব কথা লেখা হয়েছে, তার সবগুলো কথাই আমার কাছে অসত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ দেশের মানুষে জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করে, লড়াই সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছে। এ দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ বাইরের কোনো শক্তির নেই।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি জানে, তারা আর নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ, মানুষ যদি কোনো অন্যায় করে, তাকে তার শাস্তি পেত হয়৷ বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময় হত্যা, ধর্ষণ করেছিল। ২০১৪-১৬ সাল পর্যন্ত আন্দোলনের নামে তারা (বিএনপি) গাড়িতে পেট্রল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আর কখনো ক্ষমতায় আসবে না। এরা খুনি হিসেবে চিহ্নিত। এজন্য তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোট ও ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালাইন্সের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা মনিরুজ্জামান রব্বানির সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও সংসদ সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহ-সভাপতি সফি উদ্দিন মোল্লা, ইসলামী ডেমোক্রেটিক এ্যালাইন্সের মহাসচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক ও তৃণমূল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।