ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে দায়ী করলো ছাত্রদল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুন: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে দায়ী করলো ছাত্রদল

ঢাকা: প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।

রোববার (২০ এপ্রিল) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান রাকিব।  

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম গভীর শোক প্রকাশ করে জানান, শনিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। টেক্সটাইল বিভাগের ২২৩ ব্যাচের মেধাবী ছাত্র পারভেজ বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের সামনে শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেহেরাজ ইসলাম ও কয়েকজন ছাত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করে। এক পর্যায়ে হাতাহাতির পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মীমাংসা করলেও উচ্ছৃঙ্খল মেহেরাজ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে পারভেজের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শোভান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় নিয়াজীর নেতৃত্বেই এই হামলায় পারভেজের বুকে ছুরি মারা হয়।

ছাত্রদল সভাপতির অভিযোগ, ঘটনার সময় পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও কোনো সহায়তা পায়নি।  

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা মীমাংসিত ঘটনার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে ক্যাম্পাসের সামনে প্রকাশ্যে হত্যা করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে একটি মহল ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। ছাত্রদলের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রলীগের স্টাইলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে এবং ক্যাম্পাসের বাইরেও তাদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এসময় পারভেজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং মদতদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি।  

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেজ থেকে দেওয়া পোস্টের নিন্দা জানিয়ে বলেন, তারা অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ছাত্রদল মনে করে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটিতে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং তাদের পোস্টের ভাষাই এর প্রমাণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও ছাত্রদলের মতো একটি বৃহৎ সংগঠনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি প্রশাসন এবং কোনো সহযোগিতাও করেনি। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, পারভেজের পরিবারের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পাঁচজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলাম ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন শোভান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজি, আবু জহর গিফারি ও মোহাম্মদ মাহাতি হাসান।  

এ সময় ছাত্রদল সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা থানায় গিয়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং মূল আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে সারা দেশে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, যার ফলে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।  

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ পুনর্বাসিত হয়ে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিজেদের স্টেকহোল্ডার দাবি করা ব্যক্তিরাই এর দায়ভার বহন করবে।  

সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপির কেন্দ্রী কার্যালয়ের সামনে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নয়া পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
ইএসএস/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।