ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

লুটপাটেরই আরেকটা নতুন বাজেট: সাকি  

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
লুটপাটেরই আরেকটা নতুন বাজেট: সাকি  

ঢাকা: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে লুটপাটের বাজেট বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই বাজেট দেশে আর্থিকখাত লুটপাটেরই আরেকটা নতুন বাজেট। লুটপাটের বাজেটকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

জনগণের স্বার্থে বাজেট প্রণয়ন করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনবান্ধব সরকার দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর হাতিরপুলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।

দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক পরিষদের অন্যতম সদস্য হাসান মারুফ রুমী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলিফ দেওয়ান, মিজানুর রহমান মোল্লা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো সরকার স্বীকার করল যে, দেশ একটা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে। এই সংকট আসলে এবছর বা একদিনে তৈরি হয়নি, বহুদিন থেকেই এই সংকট তৈরি হচ্ছে। বহুদিন থেকে সেই সংকট অস্বীকার করে যেভাবে অর্থনীতি চালানো হয়েছে তারই পরিণামে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। সরকার ঋণ করে মেগা প্রকল্প চালু করে দফায় দফায় খরচ বাড়িয়ে সেসব প্রকল্প শেষ করার মাধ্যমে দেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে। এবারের বাজেটের সবচাইতে বড় খাত হচ্ছে, এই সমস্ত ঋণের সুদ পরিশোধের খাত।

অথচ সংকটের কথা বললেও, অর্থনীতির সংকোচনের নানান ধরনের কথা বললেও, সংকটের আসল কারণ যে এই মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি, তার কোনো নিদান এ বাজেটে নেই। মেগা প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং আরও ঋণ করে ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করছে সরকার। পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক সংকোচনের কথা বলে যেভাবে বিশেষত ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণপত্র খোলা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বা ঋণপত্র খোলায় যত বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, তাতে অর্থনীতির গতি মন্থর হবে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমবে, কর্মসংস্থান কমবে এবং একটা বিরাট অংশের মানুষের ভেতরে তার প্রভাব ছড়িয়ে যাবে।

গণসংহতি আন্দোলনের বাজেট পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, সরকার যে হারে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা করেছে, তাতে সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাত এবং বিশেষভাবে ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ পাবেন না। আর দেশের অর্থনীতিতে যেহেতু বেসরকারি খাতের ভূমিকাই বেশি সেক্ষেত্রে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। অর্থাৎ সরকার দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং আসন্ন অর্থনৈতিক ধস প্রতিরোধে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। তারা দেশের রিজার্ভ সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে ঋণ করে যেভাবে সাময়িকভাবে সামাল দিয়ে সংকটটাকে কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা নতুন ঋণের ফাঁদে ফেলে দেশকে আরও গভীরতর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।

কালো টাকার সাদা করা প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এবারের বাজেটেও ফ্ল্যাট ১৫% ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, অনেকেই তাদের বৈধ টাকা প্রদর্শন না করায় তাদের টাকা কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। সেটাকেই সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। কথাটা যে কত বড় মিথ্যা, সেটা এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এই যে বেনজীর আহমেদ বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, তার পক্ষে এই টাকা সাদা করে নেওয়ার সুযোগ ছিল কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘না, তার বিপক্ষে একটি আইনি প্রক্রিয়া চলছে ফলে তার পক্ষে এই টাকা সাদা করে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ’ অর্থাৎ বেনজীর আহমেদের বিপক্ষে যদি আইনি প্রক্রিয়া চলমান না থাকতো তাহলে তার পক্ষে এই অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ সাদা করে নেবার সুযোগ অবশ্যই থাকতো।  যেরকম আছে আরও অসংখ্য ব্যক্তি যারা বেনজীর আহমেদের মতো অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে তাদের জন্য। যদি সরকারের উদ্দেশ্য এটাই হতো যে বৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জিত অর্থ যা প্রদর্শিত হয়নি তাকে বৈধকরণের সুযোগ দেওয়া, তাহলে বৈধকরণের ক্ষেত্রে অর্থের উৎস প্রদর্শন এবং তার বৈধতা প্রমাণের শর্ত থাকতো। এই শর্তের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে যে, সরকার মূলত অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনকে উৎসাহিত করছে এবং তাদের বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের বলেছে, এই বাজেটের একটি ঘোষিত লক্ষ্য হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। প্রথমত মূল্যস্ফীতির হিসেবেই রয়েছে ঘাপলা। সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি বলা হচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। কিন্তু বিআইডিএসের হিসাব বলছে মূল্যস্ফীতি ১৫%। সরকার আসলে কত পারসেন্ট থেকে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় পার্সেন্ট নিয়ে আসতে চায়, সেই প্রশ্ন আসে গোড়াতেই। তারপরও দেখা যাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এই বাজেটে অনুপস্থিত। বরং ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। শুধু সুদহার বাড়িয়েই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার চিন্তাটা আসলে হাস্যকর।  বরং উচ্চ ঘাটতি সম্পন্ন বাজেট করে, ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে তা বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা তা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়াবে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত দরপতনও ভূমিকা রাখবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।