ঢাকা, শনিবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

কুয়েটে হামলার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয়, দাবি সংবাদ সম্মেলনে 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
কুয়েটে হামলার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয়, দাবি সংবাদ সম্মেলনে 

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন এবং ছবি, ভিডিও ফুটেজ পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সে অনুযায়ী মঙ্গলবারের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ, ইফাজ ও ইউসুফ নামের তিনজন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশে আমরা পদার্পন করেছি। সেই বাংলাদেশে যদি আমরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলি ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। বিগত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আনলে সামনে রাজনীতি করাটা কঠিন হবে।  

ছাত্রদল শুরু থেকেই ইতিবাচক রাজনীতি করে আসছে। সংকটটা তখনই প্রকট হবে যদি আপনি জুলাই-আগস্টের স্প্রিটের সঙ্গে না যান। ছাত্রদল সবসময় জুলাই-আগস্টের স্প্রিটকে ধারণ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে চায়। আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ চাই। যেখানে সব দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। ছাত্রলীগের মতো একটি দলই রাজনীতি করবে বাকিদের যদি রাজনীতি করতে না দেন তাহলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কুয়েটে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখে কোন মুখে দাবি করে তারা এখানে ছাত্র রাজনীতি চালু করতে দিবে না।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট কুয়েটের একটি কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে স্পষ্ট প্রকাশ পায় যে সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু আছে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- ছাত্রদলের ছেলেরা হেটে যাচ্ছে, অপরদিকে ওরা মিছিল নিয়ে আসছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক দেখিয়ে দিচ্ছে ছাত্রদলের ছেলেরা যাচ্ছে এবং তার উস্কানিতে ছাত্রদলের ছেলেদের তারা ধরেছে এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে।  

গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ছাত্রলীগের মতো যারা আচরণ করবে, তাদের পরিণতিও ছাত্রলীগের মতো হবে। কিন্তু আমরা জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি গতকালকের এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়ী এবং তাদের ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের মতোই।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সাফি ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হাসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, সোহেল রানা, নুরুজ্জামান চন্দন, কুয়েট শিক্ষার্থী রাহুল জাবেদ, ইফান ফয়সাল, শেখ জিলানী ও মাসুম।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেনজার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’ ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ -সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া কুয়েটের বাহিরেও ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশ-পাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী, ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে বেশ কয়েকজনকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
এমআরএম/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।