ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

পায়ে হেঁটে জনতার কাতারে নাহিদ, বললেন ‘লড়াই শেষ হয়নি’

ফাহিম হোসেন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
পায়ে হেঁটে জনতার কাতারে নাহিদ, বললেন ‘লড়াই শেষ হয়নি’ ছবিতে সাদা শার্ট পরিহিত নাহিদ ইসলাম হেঁটে যাচ্ছেন

ঢাকা: সরকারি গাড়ি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রবেশ করেন নাহিদ ইসলাম। সেখানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে আসেন পায়ে হেঁটে।

পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এই তরুণ রাজনীতিতে ফিরছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান, সরকার পতনের একদফা থেকে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা— গত ছয় মাসে নাহিদ ঘটনাবহুল এক জীবনের মধ্যে ছিলেন। ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যসচিব থেকে তিনি হয়ে ওঠেন ফ্যাসিবাদী সরকার হঠানোর অন্যতম অগ্রনায়ক।

সরকার থেকে দায়িত্ব ছেড়েই নাহিদ বলেন, ‘লড়াই এখনো শেষ হয়নি। নতুন রূপে শুরু হচ্ছে। ’ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিয়ে গঠিত হতে যাওয়া সম্ভাব্য নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে দলটি আত্মপ্রকাশ করবে। তার আগেই দলের কমিটিতে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক লড়াইয়ের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে।

নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে নাহিদ লেখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ, যোদ্ধা ও আপামর জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে আগস্টে সরকারে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেবল সরকারের ভেতরে থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই আজ আমি সরকার থেকে বিদায় নিচ্ছি— একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে।

এদিকে সরকার ছেড়ে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নাহিদ ইসলামের সহযোদ্ধা ও নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে যাওয়া সদস্যরা। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাহিদের ছবি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন।

নাহিদের পদত্যাগের পর জুলাই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুকে লেখেন, রাজপথে স্বাগতম, সহযোদ্ধা। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। ’

নাহিদ ইসলামের আগামীর যাত্রার প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তারও পদত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম লেখেন, আপনাকে রাস্তার কাতারে ফিরে পেয়ে অসম্ভব গর্ব হচ্ছে। আবু বাকের মজুমদার লেখেন, ওয়েলকাম ব্যাক কমরেড।

নাহিদ ইসলামের সরকার ছেড়ে রাজনৈতিক দলে আসাকে অনন্য নজির হিসেবে দেখছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মিরাজ মিয়া। নাহিদকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল এক দফার ঘোষক হিসেবে আপনি ইতিহাস তৈরি করেননি। সরকারি গাড়ি, বাংলো, ভিআইপি প্রটোকল, ক্ষমতা-সব ছেড়ে জনতার কাতারে এসে আমাদের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য নজির তৈরি করলেন।

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় নাহিদ একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। ’

‘আমরা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা করি, সে আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে যে ছাত্র-জনতা অংশ নিয়েছে, সেই শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করছি, সরকারের চেয়ে সরকারের বাইরে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে’ বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুরের প্যানেল থেকে সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। নাহিদ এই সংগঠনের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাদের সাথে বিভিন্ন ভাবধারা ও পন্থার ছাত্রনেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগে জড়িত রয়েছেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তৎকালীন শীর্ষ দুই নেতা আখতার হোসেন ও নাহিদ ইসলাম যথাক্রমে নতুন দলের সদস্য সচিব ও আহবায়ক হতে যাচ্ছেন।

নাহিদ কোটা সংস্কার আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। তাকে তৎকালীন সরকার শুরুতে গুম করে নির্যাতন করে পরে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। কিন্তু নাহিদ দমে যাননি। ১ আগস্ট ডিবি হেফাজত থেকে তিনিসহ ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তারা পুনরায় রাজপথে যোগ দেন।

নাহিদ ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতনের একদফার ঘোষণা দেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
এফএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।