ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত সরকারের বিকল্প হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (১৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) গণতন্ত্রের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করবেন, নির্বাচনের কথা বলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করবেন, এটা কি গণতন্ত্রের জন্য শুভ? এটা কি গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা ছিল? যখনই প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য দাবি করি, তখনই বিভিন্ন সময় উপদেষ্টাদের বলতে শুনা যায় যে জনগণ নাকি তাদেরকে পাঁচ বছরের জন্য চায়।
এ সময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে তো আমরাও বহু কমেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। এটা কি উনি (স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) দেখেননি?
উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের স্বামী রাষ্ট্রচিন্তুক ফরহাদ মজহারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, উনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে নির্বাচনের মাধ্যমে নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না, লুটেরাদের সাম্রাজ্য নাকি প্রতিষ্ঠা হয়। যে নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবাদিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য এ দেশের হাজার মানুষ শহীদ হলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলো, সেই নির্বাচন; সেই ভোটাধিকারকে আপনারা অস্বীকার করছেন? কাদেরকে আপনারা উৎসাহিত করছেন? কোন গণতান্ত্রিক শক্তিকে আপানারা সুবিধা দিচ্ছেন?
তিনি আরও বলেন, কাদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা প্রায় ডিসেম্বর-জুন আসা-যাওয়া করছেন? প্রধান উপদেষ্টা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছেন না কেন? আপনি (ড. ইউনূস) একজন সম্মানিত ব্যক্তি। আপনার এমন শিপ্টিং জাতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভালোভাবে নেবে না। আমাদের সঙ্গে আপনারা বৈঠক করেছিলেন, কথা দিয়েছিলেন যে আপনাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে ডিসেম্বরকে সামনে রেখে জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি এবং তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আগামী জুন মাসের ভেতরে সমাপ্তি হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার জন্য উদগ্রিব।
তিনি বলেন, সেই ১/১১ এর মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের কথা আপনাদের মনে নেই? বিরাজনীতিকরণের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা তারা করেনি? আমি বলতে চাই না তেমন পদক্ষেপ বর্তমানে দৃশ্যমান হোক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে এক দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশে গণতান্ত্রিক এবং গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি করেছিল। কেউ যদি এটাকে বিপ্লব বলতে চায়, তাহলে আমি দুঃখ প্রকাশ করব। এটা কোনো সামাজিক বিপ্লব নয়। অর্থনীতি, সামাজিক রীতি-নীতি এবং ব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো বিপ্লব হয়নি। গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা থেকে, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে।
বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদেশে ভোটাধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের সংবিধান যেটা রোগাক্রান্ত হয়েছে, সেই সংবিধানকে যথাযথ সংস্কারের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের মধ্য দিয়ে, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংবিধান দেখতে চাই। যে সংবিধানের ভিত্তিতে আমাদের দেশ একটি ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা পাবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে, এ দেশের জনগণের জন্য।
এ সময় প্রতিনিধি সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
টিএ/জেএইচ