ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবির পাঠ: কাজের প্রেরণা ও সফলতা লাভের জন্য পরামর্শ জরুরি

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
আজ তারাবির পাঠ: কাজের প্রেরণা ও সফলতা লাভের জন্য পরামর্শ জরুরি

আজকে অনুষ্ঠিত ২২তম খতমে তারাবিতে থাকবে মানুষের জন্য আবশ্যকীয় অনেকগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আলোচনা। এই গুণগুলো অর্জন করে জীবনে অনুশীলন করতে পারলে আমরা প্রত্যেকেই হতে পারব সত্যিকারের মানুষ।

আজকের তারাবিতে আলোচিত গুণসমূহের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি গুণ হলো-  যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করা। সে কাজটি হতে পারে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক। ইসলাম বলে, ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নেওয়া নিরাপদ।

এ বিষয়ে সূরায়ে শুরার ৩৬-৪১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সেই সব বান্দাদের ১০টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, যাদের জন্য তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছেন সর্বোৎকৃষ্ট চিরস্থায়ী পুরস্কার।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বস্তুত তোমাদের যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ, কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী। এগুলো তাদের জন্য যারা ঈমান আনে, নিজেদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে, কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকে, রাগান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়, নিজেদের প্রভুর নির্দেশে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের কাজগুলো সমাধা করে থাকে নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে, আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা দান করে এবং তারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কিন্তু মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। আর যে ক্ষমা করে ও আপোস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না। ’

পরামর্শ সাপেক্ষে কাজ করা আল্লাহর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি তার প্রেরিত নবীকে পর্যন্ত পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং কাজের ব্যাপারে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৫৮

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার এই নির্দেশকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলেছেন। হিজরি ২য় সালে মদিনা থেকে ৪০ মাইল দূরে রাওহা নামক স্থানে অবস্থান কালে মহানবী (সা.) জানতে পারেন, তাকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে ৯৫০ জনের সশস্ত্র বাহিনী আসছে। তিনি তখন কর্তব্য স্থির করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসেন। পরে পরামর্শ পেয়ে তিনি সবাইকে সামনে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেন।

বদর যুদ্ধে ৭০ জন শত্রুসেনা আটক হলে যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে করণীয় স্থির করার উদ্দেশ্যেও মহানবী (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরামর্শ অনুযায়ী কর্মপন্থা ঠিক করা হয়। এভাবে দেখা যায়, নবী করিম (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরামর্শ করে চলেছেন।

তিনি যুদ্ধ পরিচালনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে যেভাবে পরামর্শ করতেন, সেভাবে পারিবারিক ও সামাজিক কাজও পরামর্শ করে সম্পাদন করতেন। যৌক্তিত, সুন্দর পরামর্শ যেভাবে তিনি সমাজ সচেতন, বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ, দূরদর্শী ব্যক্তিদের কাছ থেকে গ্রহণ করতেন, আবার সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে সেভাবে ঘরের স্ত্রীর পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করতেন। প্রয়োজনে আবার গণমানুষের সঙ্গেও পরামর্শ করতেন।

পরামর্শ করা আল্লাহর আদেশ, নবীর সুন্নত ও জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য। পরামর্শ করে কাজ করলে কাজের মধ্যে কল্যাণ ও বরকত আসে, আসমানি আজাব দূর হয়, পরষ্পরের ভুল বুঝাবুঝি নিরসন হয়, নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব কাজ পরামর্শের মাধ্যমে সম্পন্ন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
টিসি/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।