ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজকের তারাবিতে গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা প্রসঙ্গে পাঠ

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
আজকের তারাবিতে গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা প্রসঙ্গে পাঠ

আজকে অনুষ্ঠিত হবে ২৩তম খতমে তারাবি। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াতকৃত কোরআনে কারিমের আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে থাকবে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা বিষয়ে অালোচনা।



আলোচনায় রয়েছে গণমাধ্যমের কর্মী বাহিনীর জন্য করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে নির্দেশনা। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের জন্যও রয়েছে নির্দেশনা। এ প্রসঙ্গে সূরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের নিকট কোনো বার্তা বহন করে আনে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যেন অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। ’

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে নিয়ে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কোনো নারী যেন কোনো নারীকে নিয়ে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারীণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না। ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। হে মুমিনগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান হতে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। ’ –সূরা হুজরাত: ১১-১২

উল্লেখিত আয়াতের ভিত্তিতে ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে, প্রকাশিতব্য সংবাদ সম্পূর্ণ সত্য ও বাস্তবসম্মত। সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে কোনো সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে শুধুমাত্র সংবাদের তথ্যসূত্র উল্লেখ করার দ্বারা কর্তৃপক্ষ সে সংবাদের দায় এড়াতে পারবে না। প্রয়োজনে নিজস্ব জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশের পূর্বে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

কারও ব্যক্তিগত জীবনের এমন কোনো দোষ বা অনাচার যা অন্যের জন্য, দেশের জন্য, সমাজের জন্য, পরিবেশের জন্য, প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর নয় এবং এ দোষটি সে ব্যক্তি প্রকাশ্যে করে না, তা অনুসন্ধান করা যাবে না। এ ধরণের কোনো সংবাদ সংগৃহীত হলে তা প্রকাশ করা যাবে না।

কারও ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে কোনো ধরণের উপহাস করা যাবে না। তার নামের সঙ্গে মন্দ কোনো পদবী যোগ করা যাবে না। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এমন কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না- যার কারণে অন্যরা তাকে নিয়ে উপহাস করার সুযোগ পাবে। যেমন: কোনো ব্যক্তি অশুদ্ধ ভাষায় কোনো উত্তর দিল সেক্ষেত্রে হুবহু তা প্রকাশ না করে, ভাষাকে শুদ্ধ ও মার্জিত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

কারও নামে খুনের মামলা হয়েছে অথবা সন্ত্রাসের মামলা হয়েছে অথবা পুলিশ ৫৪ ধারায় কাউকে সন্দেহবশতঃ গ্রেফতার করেছে। শুধু এ কারণে তার নামের সঙ্গে খুনি বা সন্ত্রাসী অভিধা যোগ করে সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। কেননা, মামলা হয়রানিমূলক হতে পারে, পুলিশ ভুল করতে পারে।

নিছক অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে অপরাধী হিসেবে প্রকাশ করলে অনুমানকে আমলে নেওয়া হয়। আর আল্লাহতায়ালা অনুমান থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ যদি অকাট্যভাবে আদালতে প্রমাণিত হয়, বিজ্ঞ আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়- তখনই কেবল তাকে খুনি, সন্ত্রাসী, চোর ইত্যাদি বলার সুযোগ হয়।

সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে যেভাবে গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা আছে, পরকালীন জবাবদিহিতা আছে ঠিক সেভাবেই প্রকাশিত সংবাদ গ্রহণের ব্যাপারেও পাঠক ও শ্রোতাদের পরকালীন জবাবদিহিতা আছে। এক কথায়, গণমাধ্যমের সংবাদ গ্রহণে সতর্ক হতে হবে, সচেতন হবে। সংবাদের তথ্যসূত্র সম্পর্কে, গণমাধ্যমের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বাস্তব ধারণা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।