ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রমজান থেকেই শুরু হোক সুদ পরিহারের প্রত্যয়

আব্দুল মতিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
রমজান থেকেই শুরু হোক সুদ পরিহারের প্রত্যয় রমজান থেকেই শুরু হোক সুদ পরিহারের প্রত্যয়

প্রাক ইসলামি যুগে আরবের লোকেরা বলত, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই অনুরূপ। সুদের মাধ্যমে যেমন মুনাফা অর্জিত হয়, তেমনি ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যেও মুনাফাই উদ্দেশ্য।

অতএব, সুদ হারাম হলে ক্রয়-বিক্রয়ও তো হারাম হওয়া উচিত। অথচ কেউ বলে না- ক্রয়-বিক্রয় হারাম।

তারা আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করল। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। ’ -সূরা বাকারা: ২৭৫

কিন্তু তারা সুদকে ব্যবসার একটি প্রকার বানিয়ে সুদকে হালাল করল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তিরই ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। তা এ জন্য যে, তারা বলে; ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। ’ -সূরা বাকারা: ২৭৫

মুসলিম বিশ্বের ইসলামি আইন বিষয়ের অভিজ্ঞজনরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, সুদ হচ্ছে উপার্জিত অর্থের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর সুদি কারবার হচ্ছে কবিরা গোনাহ।  

বিশেষ করে কবিরা  গোনাহগুলোর মধ্যে সুদের শাস্তির ধরন কী হবে- তা হাদিসে সরাসরি উল্লেখ করা আছে। এমনকি সুদ বর্জন করা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ অসিয়তগুলোর অন্যতম।
 
সুদ পরিহারের ক্ষেত্রে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যারা সুদ খাবে তাদের প্রতি অভিশাপ প্রদানসহ আল্লাহর রহমত থেকে তাদের দূরে থাকার কথাও উচ্চারিত হয়েছে।  

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) অভিসম্পাত করেন সুদের সঙ্গ সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে। তারা হচ্ছে- সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, তারা সবাই সমপর্যায়ের দোষী। ’ -সহিহ মুসলিম

এমনকি কিছু হাদিস এসেছে যেগুলোতে সুদের কাজ সম্পাদনকারীকে নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচার করার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুদের গোনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো- আপন মাকে বিবাহ করা। -ইবনে মাজাহ

দুনিয়াতে সুদি কারবারীদের কপালে আছে অপমান, লাঞ্ছনা এবং স্থায়ী লজ্জা। আর আখেরাতে তাদের কপালে জুটবে হাদিসের ভাষায়- হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, দু’জন লোক আমার নিকট এসে আমাকে একটি পবিত্র স্থানে নিয়ে গেল। অতঃপর আমরা (তিনজন) চলতে চলতে একটি রক্তের নদীর নিকটে পৌঁছলাম। তথায় এক লোক সাঁতার কাটছে এবং অন্য এক লোক তীরে দাঁড়িয়ে আছে, যার সামনে অনেক পাথর। নদীতে সাঁতার কাটতে থাকা লোকটি যখন তীরের কাছাকাছি আসে তখন তীরে দাঁড়ানো লোকটি পাথর দিয়ে তাকে এমন জোরে আঘাত করে যেন লোকটি পুনরায় পূর্বের স্থানে ফিরে যায়। অতঃপর যখন লোকটি আবার সাঁতরে তীরে উঠতে চেষ্টা করে- তীরে দাঁড়ানো লোকটি পূর্বের ন্যায় পাথর দিয়ে সজোরে তাকে ঢিল মারে। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, নদীর ভেতরের লোকটা কে? ফেরেশতাদের একজন বললেন, সে সুদখোর। -সহিহ বোখারি

আখেরাতে একজন ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হবে দুনিয়াতে অপরাধের মাত্রানুযায়ী। সুতরাং এ সুদখোররা রক্তচোষার সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে। তারা মানুষের শ্রম, ঘাম ও রক্তকে শুষে নেয়। তারা মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। তারা তাদের প্রতি কোনো দয়া প্রদর্শন করে না। সুতরাং সুদখোরের যথাযথ শাস্তির জায়গা হচ্ছে রক্তের পুকুর, যেখানে তারা হাবুডুবু খাবে কিন্তু সেখান থেকে তারা কিনারায় আসায় সুযোগ পাবে না আবার বেরও হতে পারবে না।
 
সুদের ভয়াবহতার দিক খেয়াল করে, মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হজরত রাসূল (সা.) জাহেলি যুগের সকল প্রকারের সুদ বাতিল ঘোষণা করেন। আর সুদ প্রথা বিলুপ্ত করতে নিজের নিকটতম আত্মীয় চাচা আব্বাস থেকে শুরু করেন।  

রাসূল (সা.) বলেন, জাহেলি যুগের সুদও রহিত করা হলো। আমাদের বংশের প্রাপ্য সুদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমি আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আববাস (রা.) -এর প্রাপ্য সমুদয় সুদ রহিত করলাম। ’ -ইবনে মাজাহ

হজরত ইবনে আব্বাস  (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুদি কারবার থেকে বিরত থাকবে না, এ ক্ষেত্রে মুসলিম শাসকের দায়িত্ব হলো- তাকে তওবা করতে বলা, এর পরও যদি বিরত না থাকে তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়া। ’ -ইবনে কাসির

ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ব্যবসায়িক লেনদেন হতে অর্জিত অর্থকে ‘মুনাফা’ নাম দিয়ে তা হালাল করেছেন। ঋণ, ধার ও কর্জ থেকে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থকে ‘সুদ’ নামকরণ করে তা হারাম করেছেন। তাই আমাদের দায়িত্ব সুদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে তা পরিহার করা।  

তাই আসুন, এ মহিমান্বিত মাস রমজান থেকেই সুদ পরিহারের নিয়ত করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।  

লেখক: অফিসার, শরিয়া সেক্রেটারিয়েট, এক্সিম ব্যাংক

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।