ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রাসূলুল্লাহ সা. ইতিকাফের সময় যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতেন

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
রাসূলুল্লাহ সা. ইতিকাফের সময় যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতেন রাসূলুল্লাহ সা. ইতিকাফের সময় যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতেন

ইতিকাফ আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। ইতিকাফকারী জাগতিক সব ব্যস্ততা ও পিছুটান পেছনে ফেলে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল হয়। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের সাধনা করে।

সারা বছর ইতিকাফ করার অবকাশ থাকলেও রমজানে শেষ দশকে ইতিকাফ করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।

এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং মৃত্যুর বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। -সহিহ বোখারি

অন্য হাদিসে এসেছে তিনি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হাদিস বিশারদগণ বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের মাধ্যমে ‘লায়লাতুল কদর’ অনুসন্ধান করতেন। তা ছাড়া রমজানের প্রথম দুই দশকের ভুলত্রুটি মার্জনা করার সুযোগও ইতিকাফের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও ইতিকাফ ছেড়ে দেননি। একবার রমজানের ইতিকাফ ছুটে গেলে তিনি শাওয়াল মাসের প্রথম দশকে তা কাজা করে নেন। সাধারণ মুসলমানের জন্য ইতিকাফের কাজা করা আবশ্যক নয়। তবে হ্যাঁ, শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কারণ ব্যতীত ইতিকাফ ছেড়ে দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফের সময় মসজিদে তাবু দিয়ে আড়াল তৈরি করতেন। যেখানে তিনি একান্তে ইবাদতে মশগুলে হতেন এবং সেখানে তার বিছানা ও প্রয়োজনীয় আসবাব থাকতো। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবু স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তা মসজিদে স্থাপন করা হলো। তিনি তাতে অবস্থান নিলেন এবং মানুষ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহতে নিমজ্জিত হলেন এবং আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে রত হলেন। একবার তিনি তুর্কি তাবুতে ইতিকাফ করেন এবং তার দরজায় মাদুর টানিয়ে দেন। ’ -সহিহ মুসলিম

এ হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য পৃথক বিছানা রাখা আবশ্যক এবং মসজিদে বিছানা ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এমনভাবে গুছিয়ে রাখা আবশ্যক যাতে সাধারণ মুসল্লিদের কষ্ট না হয়।

ইতিকাফ করার সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের ও মসজিদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। সহিহ বোখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফের সময় মসজিদ থেকে মাথা বের করে দিতেন এবং হজরত আয়েশা (রা.) তার মাথা ধুয়ে দিতেন এবং চুল আঁচড়ে দিতেন। অথচ তিনি ছিলেন ঋতুমতী। সুতরাং বোঝা যায়, ইতিকাফকারী ঋতুমতী স্ত্রীর রান্না করা খাবার গ্রহণ করতে পারবেন এবং তার সেবা নিতে পারবেন।

ইতিকাফকারী বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হবে না। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হতেন না। সহিহ বোখারিতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইতেকাফের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিনা প্রয়োজনে ঘরে প্রবেশ করতেন না। ’ আর সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘মানবিক প্রয়োজন ব্যতীত তিনি ঘরে আসতেন না। ’

ইতিকাফকারীর জন্য স্ত্রী সংশ্রব নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা স্ত্রী সংশ্রবে যেও না মসজিদে অবস্থানকালে। ’ -সূরা বাকারা।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফের সময় স্ত্রী সংশ্রব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারীর জন্য (রাসূল সা. এর) সুন্নত হলো- সে রোগী দেখতে বের হবে না, জানাজায় অংশগ্রহণ করবে না (মসজিদ এলাকার বাইরে হলে), স্ত্রীর স্পর্শ ও সংশ্রব থেকে বিরত থাকবে এবং অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হবে না। ’ -সুনানে আবু দাউদ

তবে রাসূল (সা.)-এর স্ত্রীগণ ইতেকাফের সময় তার সঙ্গে দেখা করতেন এবং কথাও বলতেন। হজরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রা.) থেকে বর্ণিত। ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করছিলেন। আমি রাতের বেলা তার সঙ্গে দেখা করতে যাই এবং কথা বলি। অতঃপর আমি ফেরার জন্য দাঁড়াই। তিনি আমার সঙ্গে দাঁড়ান আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। ’ –সংক্ষেপিত, সহিহ বোখারি 

তাই আসুন! ইতিকাফের মাধ্যমে রমজানের প্রাচুর্য, লায়লাতুল কদরের মাহাত্ম্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।