ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ইতিকাফে মেলে খোদাকে জানার আনন্দ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
ইতিকাফে মেলে খোদাকে জানার আনন্দ অপার মহিমার রমজান

অকাতরে দীন-দু:খীর জন্য বিলিয়ে দেওয়ার মাস রমজান। প্রাণ খুলে গরিব-দু:খীর হাত ভরে দেওয়ার এই মাস। আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্যসব মাসের তুলনায় এ মাসে অনেক বেশি দান-সদকা করতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) কখনই কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না আর রমজান এলে গরিবদের দান-সদকা করার জন্য যেন উদগ্রীব হয়ে যেতেন। 

তার মতে, বিশুদ্ধ নিয়তে এক টুকরা খেজুর দেওয়া অশুদ্ধ নিয়তে পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য দেওয়ার চেয়েও উত্তম। তাই যখন তার যতটুকু সাধ্য হতো ততটুকুই তিনি দান করতেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর-পরিমাণ দান করে, (আল্লাহতায়ালা তা কবুল করেন) আল্লাহ তো পবিত্র বস্তু ছাড়া অন্যকিছুই কবুল করেন না।  

আল্লাহ তার সে দান কুদরতি ডান হাতে গ্রহণ করেন। পরে দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাকে। অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। (বুখারি শরিফ)

ইসলামের অন্যতম করণীয় বিষয় জাকাত। সম্পদশালীদের ওপর নামাজ রোজার মতোই জাকাত ফরজ। কোরআন-হাদিসে অসংখ্যবার মুমিনদের দান-সদকার বিষয়ে যেমন উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তেমনি জায়গায় জায়গায় জাকাত প্রদানের প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জাকাত দেওয়ার উপকারিতা ও জাকাত না দেওয়ার ক্ষতি সম্পর্কেও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদের অবহিত করেছেন সুস্পষ্টভাবে।  

রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার জাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিনে তার ওই ধন-সম্পদ লোমহীন একটি বিষাক্ত সাপ হবে। যার চোখের ওপর দুটি কালো বিন্দু থাকবে এবং সাপ তার গলায় পেঁচানো হবে। ওই সাপ তাকে দংশন করতে থাকবে আর বলবে, আমি তোর ধন-সম্পদ। আমিই তোর জমাকৃত মাল-ভাণ্ডার। (যার জাকাত তুমি দান করোনি)। (বুখারি শরিফ)।  

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ধনীদের ওপর এই পরিমাণ জাকাত ও অন্যান্য দান-সদকা ফরজ করেছেন যা সমাজের গরিবদের জন্য যথেষ্ট। ধনীরা তাদের ওপর ফরজ দায়িত্ব পালন না করায় সমাজের গরিব, দু:খীরা ভুখা-নাঙ্গা থেকে কষ্ট পায়। তা দেখে আল্লাহতায়ালা কষ্ট পান। (তাবরানি) 

ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে জাকাত। এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, যদি ধনীদের জাকাত দরিদ্রের জন্য যথেষ্ট না হতো তা হলে আল্লাহপাক জাকাত ছাড়া আরও দান তাদের ওপর ফরজ করতেন। কাজেই আজকের বিশ্বে ভুখা-নাঙ্গা, হতদরিদ্র যেসব মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে এজন্য প্রধানতম দায়ী হচ্ছেন সমাজের ওইসব সম্পদশালী ব্যক্তি যারা জাকাত দান করেন না।  

প্রকৃতপক্ষে তারা গরিবদের প্রতি এক নীরব অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ বলেন, তোমাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের ন্যায্য অধিকার। (আল কোরআন) অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আল্লাহর রাসুল (সা.) আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।

তার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র মদিনায় জাকাতের ভিত্তিতে দারিদ্র্য বিমোচন করে আমাদের সামনে আদর্শ রেখে গেছেন। তার সাহাবিরাও তার সেই আদর্শের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইসলামী খেলাফতে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।  

রমজানের মাস যেহেতু দান-সদকার মাস, তাই আমাদের উচিত এ মাসে জাকাত ও সদকার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে এগিয়ে আসা। হে সিয়াম পালনকারী ভাইগণ, আজ সূর্যবিদায় থেকেই প্রস্তুতি নিন ইতিকাফের। এ হচ্ছে এমন এক ইবাদতি ধ্যান, যে ধ্যানে খুব সহজেই খোদা মিলে।  

মসজিদের নির্জন কোণে দিনভর খোদার তসবি-তাহলিলের কী যে আনন্দ, জীবনে যে ইতিকাফে বসেছেন তিনিই বোঝেন। আপনিও প্রস্তুতি নিন জীবনে অন্তত একবার ইতিকাফ সাধনার স্বাদ নিয়ে খোদাকে জানার কী আনন্দ লাভের! আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দিন। আমিন!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
এমএ /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।