কুমিল্লা: বয়সের ভার, পেশাগত ব্যস্ততা কিংবা দূরত্ব—কিছুই থামাতে পারেনি তাদের বন্ধুত্বের টান। অনুষ্ঠানে তারা নেচে-গেয়ে, আড্ডা দিয়ে, হারানো শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যান।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল অ্যালামনাইয়ের বৈশাখী উৎসব ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মিলিত হন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কেউ এখন ব্যবসায়ী, কেউ ব্যাংকার, কেউবা চিকিৎসক। বয়সের ছাপ—সাদা চুল, পড়তি দাঁত বা কুঁচকে যাওয়া চামড়া—তাদের প্রাণচাঞ্চল্য ও বন্ধুত্বের উষ্ণতায় একটুও প্রভাব ফেলেনি। সবাই যেন আবার তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির চঞ্চল শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছিলেন।
পুরুষরা গলায় লাল উত্তরীয় পরে আর নারীরা মাথায় ফুলের টায়রা পরে ঘুরে বেড়ান। দই, চিড়া, বাতাসা, কাঁচা আমের জুসসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা ছিল আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ। ছবি তোলার সময় অনেকেই মজা করে ধাক্কাধাক্কি করেন, কেউবা ঘাসে বসে পড়েন। সব মিলিয়ে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ পরিণত হয় এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়।
কুমিল্লা মডার্ন স্কুল অ্যালামনাইয়ের অর্থ সম্পাদক এবং ৭৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘এখানে এসে মনে হচ্ছে আমি আবার তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। আমরা পুনর্মিলনীর পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তাসহ নানা সামাজিক উদ্যোগ নেয়েছি। ’
কমিটির সহ-সভাপতি, ৬৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী দিলনাঁশি মোহসেন বলেন, ‘আমি আর আমার মেয়ে—দুজনই এই স্কুলের ছাত্রী ছিলাম। আজকের দিনটি যেন আমাকে আমার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। স্কুলের পায়েস ও খিচুড়ির স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। ’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— কমিটির উপদেষ্টা ৬২ ব্যাচের জামিল আহমেদ খন্দকার, ৬৭ ব্যাচের শাহ মোহাম্মদ সেলিম, কুমিল্লা অঞ্চলের সমন্বয়কারী মোবারক হোসেন সেলিম এবং ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কারী কাজী ফখরুল আলম।
তারা জানান, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। ১৯৯২ সালে স্কুলের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। এরপর থেকেই নিয়মিতভাবে এমন মিলনমেলার আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
কমিটির সভাপতি কাজী মমতাজ হক (৬৪ ব্যাচ) এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আপেল (৭০ ব্যাচ) বলেন, এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবাই স্কুল পালানো, সিনেমা দেখা, এবং অন্যান্য দস্যিপনার পুরনো স্মৃতি ভাগাভাগি করেছি। ভবিষ্যতে সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ারও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এসআরএস