গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে সরকারি টাকায় সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াত চৌধুরীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে এলজিইডি।
এছাড়া কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা হাইস্কুল থেকে রামদিয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিংয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছর হতে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কাশিয়ানী উপজেলা এলজিইডি মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। অভিযোগে বর্ণিত প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়। কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা হাইস্কুল থেকে রামদিয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে তিন দশমিক ৭৪ কিলোমিটার রাস্তা বাবদ চার কোটি ৯৫ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩০ টাকা পরিশোধ করা হয়।
অপর অংশ তিন দশমিক ৭৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য পাঁচ কোটি তিন লাখ ৮৫ হাজার ২৮৬ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
বিচারপতি খিজির হায়ত চৌধুরীর বাবার ব্যক্তিগত বাড়িতে যাওয়ার জন্য ৬৫ মিটার রাস্তা নির্মাণ করে আট লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৬.২৫ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
কাজটির মূল ঠিকাদার রাজবাড়ী জেলার মোস্তাফিজুর রহমান শরীফ। ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন বিএনপি নেতা সেলিম উকিল।
দুদক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান জানান, কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা হাইস্কুল থেকে রামদিয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব কম পাওয়া গেছে। রাস্তার কিছু অংশ ভেঙে বড় গর্ত সৃষ্টি হয় এবং বাঁকের মুখে গর্ত হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি ব্রিজের অ্যাপ্রোচে (সংযোগ সড়ক) ব্রিজের সঙ্গে রাস্তার সংযোগে উঁচু নিচু থাকায় চলাচলে গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তাটির দুই পাশে অনেক জায়গায় মাটি না থাকায় ভেঙে গেছে ও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দেখা গেছে, এ রাস্তার মান খারাপ করলেও ঠিকাদার রাস্তার পাশে অবস্থিত বিচারপতি খিজির হায়াতের বাসভবনের সামনে প্রায় ৬৫ মিটার রাস্তা সরকারি টাকায় করে দিয়েছেন। সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াত চৌধুরী ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে নিজ বাড়ির সামনে রাস্তা করিয়ে নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া পুরাতন রাস্তায় তার জমি রয়েছে বলে অনেকটুকু রাস্তায় কার্পেটিং করতে না দেওয়ায় রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক জানান, সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তার কাজে ফাইনাল বিল পরিশোধ করা হয়নি। রাস্তায় কোনো অনিয়ম বা সমস্যা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দিয়ে ঠিক করিয়ে দেব।
এসআই