রংপুর: তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর মহানগরীতে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (৪ মে) বিকেলে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত পদযাত্রায় মানুষের ঢল নামে।
তিস্তা নদীর পানি সংকট, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় রংপুর অঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে এই তিস্তা রক্ষা আন্দোলন। সেই দাবিকে ঘিরেই রংপুর নগরীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘তিস্তা বাঁচাও পদযাত্রা’।
রোববার দুপুর থেকে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। ফলে পদযাত্রাটি এক গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রংপুর শহর।
পদযাত্রাটি শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সিটি বাজার, কাছারি বাজার হয়ে জিলা স্কুলে মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিশেষ অতিথি ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
বক্তব্য দেন- বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ।
এসময় রংপুর মহানগর ও জেলা ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পদযাত্রায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা থেকে আসা কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, তার উপজেলাটি তিস্তা নদী দ্বারা প্রবাহিত পানির অভাবে চাষাবাদ দিনদিন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তিস্তা শুকিয়ে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎও শুকিয়ে যাবে।
লালমনিরহাট কালীগঞ্জ থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় রংপুরসহ এ অঞ্চলের কৃষি ও জীবিকা আজ হুমকির মুখে। অবিলম্বে তিস্তা নদী পুনঃখনন, আন্তঃদেশীয় পানি চুক্তির বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে হবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা থেকে আসা আমজাদ হোসেন ও জাকির হোসেন বলেন, প্রতি বছর আমরা বর্ষায় বন্যায় ভাসি, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করি। এটি কোনোভাবেই সহনীয় নয়। তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ।
এর আগে নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপারের মানুষজন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১ স্থানে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন। কিন্তু তারপরও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমলে নেয়নি।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় ঘোষণা ছিল যতদিন তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে।
আরএ