আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরো অর্থনীতিই আবর্তিত হয় ফলের রাজা আমকে কেন্দ্র করে। যে কারণে এখানে যেন কিছুই ফেলনা নয়।
বলা হয়ে থাকে, শিশু এবং বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ব্যক্তি ছাড়া সকলেই কোনো না কোনোভাবে আমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কারণে এখানের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এর ওপর নির্ভরশীল। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, এ জেলার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ আমচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বাগান প্রস্তুত থেকে শুরু করে আম বিপণন কিংবা আমের কারণে সৃষ্ট আবর্জনা পরিস্কার পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কেউ হয়তো কায়িক শ্রম দিচ্ছেন, কেউবা দড়ি, কেউ সুতা, থলের ব্যবসা করছেন। কিংবা সার, বিষ বা কীটনাশক বিক্রি করছেন। এমনকি ফেলনা কাগজও কাজে লাগছে আম বিপণনে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠেছে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা।
সরেজমিন ঘুরে আম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা শুনে চক্ষু চড়ক গাছ। কেবল পুরনো ফেলনা পত্রিকা বিক্রি করেই এখানকার লোকজন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ জেলায় ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। আর এসব আম বাজারজাত করার জন্যই কোটিকোটি টাকার পুরনো পত্রিকার প্রয়োজন হয়। আর তা যোগান দেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।
আমচাষী ও রফতানিকারক ইসমাইল খান শামীম বাংলানিউজকে জানান, প্রতি ২৫ কেজি আম বাক্সে ভরতে প্রয়োজন হয় দেড় কেজি পত্রিকা। আমরা হিসেব করে দেখেছি সর্বমোট দেড় কোটি কেজি কাগজের প্রয়োজন পড়ে। আর প্রতি কেজি পুরনো কাগজ কিনতে হয় গড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে। এক্ষেত্রে সব আম বাক্সে ভরতে তাদের প্রয়োজন হয় ৪৫ কোটি টাকার পুরনো পত্রিকা (কাগজ)।
বেশ কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যারা ঢাকা থেকে পুরনো পত্রিকা নিয়ে আমচাষিদের কাছে বিক্রি করেন। আর পত্রিকার কদরও বেশ। কেননা, এটা সাশ্রয়ী এবংভালভাবে কাজ করে।
শামীম বলেন, আমর নিজেরই সাত থেকে আট লাখ টাকার পত্রিকার প্রয়োজন পড়ে। শুধু দেশের বিভিন্ন স্থানে নয়, বিদেশে রফতানি করার ক্ষেত্রেও আমের প্যাকেটে পুরনো পত্রিকা ব্যবহার করা হয়।

রবিউল ইসলাম বলেন, পুরনো পত্রিকা বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ী আছেন একশ জনের বেশি। সবমিলিয়ে ৪৫-৫০ কোটি টাকার আশেপাশেই বিক্রি হয় পুরনো পত্রিকা।
শুধু কি পুরনো পত্রিকা, অনেকে সুতা বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করছেন। ফ্রুট ব্যাগিং (আম যাতে গাছে থাকতে নষ্ট না হয়, সেজন্য বিশেষ এক ধরণের থলে) বিক্রি করেও কোটি আয় করছেন অনেকে। কোটি কোটি টাকার কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এখানে তো আমচাষ বছরের শুরু থেকেই। কেননা, তখন বাগান প্রস্তুত, পরিস্কার করা হয়। সে সময়ও শ্রমিকসহ নানা উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। তাই অন্য ফসলের আবাদ হলেও মূলত এখানকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ আমে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আমচাষী মো. মতিন বলেন, ঘুরে ফিরে যে যা কিছুই করুক। সকলেই কোনো না কোনোভাবে আমচাষের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। তাই আমরা আমনির্ভর।
রাজশাহীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো হামিম রেজা জানান, এখানে ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য সব মিলিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা। আর এ অর্থ ঘুরে ফিরে এখানেই সবার কাছে যায়।

ইইউডি/ওএইচ/