ঢাকা, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ মে ২০২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:০৬, মে ১৪, ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ...

চট্টগ্রাম: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফরে এসেছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  

বুধবার (১৪ মে) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সফরকে ঘিরে চট্টগ্রামে সাজ সাজ রব পড়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে সমাবর্তী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীজনের প্রাণের মেলা বসেছে।
  

শুরুতেই তিনি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৫ নম্বর ইয়ার্ডে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেন।  

 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বহুদিন থেকে আসবো, সবার সঙ্গে দেখা করে এটার অগ্রগতি জানবো তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার কাছে কোনো অপরিচিত জায়গা না। যেহেতু এখানে বড় হয়েছি। ছাত্রাবস্থায় এখানে এসেছি জাহাজ দেখার জন্য। যখন জাহাজ থেকে মাল খালাসের সেই দৃশ্য ভিন্ন জিনিস। খোলের ভেতর গিয়ে মাথার করে বস্তা বস্তা ওপরে উঠাচ্ছে। তারপরে ক্রেন আসলো পরবর্তী পর্যায়ে। সেই পর্যায় থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আজ বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু বরাবরই দুঃখ, এটার পরিবর্তন এত শ্লথ কেন? দুনিয়ার সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে আমাদের এখানে এটা পাল্টায় না কেন? এটা আজকের প্রশ্ন না। চট্টগ্রামবাসী হিসেবে এ পথে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা হয়, বিশেষ করে যখন গাড়ি চলে না। আটকে যায়। কী হলো ট্রাক ভর্তি রাস্তায়, মাল খালাস করতে পারছে না। এদিকে ট্রেন মিস করে ফেলেছি। কাজেই এটা সম্পর্কে চিন্তা না করে উপায় নেই। কথাবার্তা বলেছি, মাঝেমধ্যে লেখালেখি করেছি এটা নিয়ে। এবার যখন সুযোগ পেলাম প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করছি এটার ব্যাপারে নজর দেব, কীভাবে এটার পরিবর্তন করা যায়। একটা সত্যিকার বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে।  

আমরা খুবই অভিভূত যেভাবে বন্দরের ছবি দেখালো। ভালো লাগে। কিন্তু দুনিয়া তো এখানে আটকে নাই। দুনিয়া এর থেকে বহুদূর চলে গেছে। স্পিডি স্ক্রিনে দেখালে ভালো হতো। একপাশে বিশ্বের বন্দর, একপাশে চট্টগ্রাম বন্দর। তখন বোঝা যেত আমাদের দূরত্ব কোথায়। আমরা অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে থাকার জন্য দুঃখও খুব বেশি না কারও কাছে। নানা ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ঝগড়া করে, কিন্তু যেটার শারীরিকভাবে বিরাট পরিবর্তন দরকার এটা নিয়ে কারও খুব গরজ আছে বলে মনে হয় না। সেই জন্য বারে বারে লুৎফুরকে পাঠাচ্ছিলাম। বন্দর চেয়ারম্যান জামানের কথায় আশ্বস্ত হলাম, একটা লোক আছে। তারপর সাখাওয়াত আসলো। বললাম, আর কথা শুনতে চাই না। অমুক তারিখের মধ্যে বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে দিয়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না থাকে তাদের রাজি করাতে হবে। মানুষকে গররাজি করে করার দরকার নাই। কারণ এমন একটা বিষয়, পুরো জিনিসটা শুনলে গররাজি হওয়ার কারণ নাই। সবাই চায় তার ভালো হোক। না বোঝার কারণে আমার ক্ষতি হবে, এটা হলে ভালো হবে না, এটা তো আমাদের ছিল ওদের কেন দিচ্ছেন এসব কথা আসবে। আমি আসার আগে আবার পাঠালাম আশিককে। যাও তুমি ব্যাখ্যা করো আমরা কী করতে চাচ্ছি, কেন চাচ্ছি। এ চিন্তার কারণ হলো বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টাতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর হলো ভরসা। এটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন কোনো পাতা, নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। এ পথ খুলে দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ খোলে। এ পথ না খুললে বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ যতই লাফালাফি করো, ঝাপাঝাপি করো কিছুই হবে না।

একজনকে বোঝাচ্ছিলাম, আমি বললাম চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। এ হৃদপিণ্ড যদি দুর্বল হয়, তুমি ডাক্তার বৈদ্য সব কিছু আনো মেরামত হবে কিন্তু চলে না। ছোট্ট একটা হৃদপিণ্ড। তার মধ্যে হলো রোগাক্রান্ত। এ হৃদপিণ্ডকে তুমি যতই ঠেলাঠেলি করো এটা দিয়ে বেশি দিন রক্ত সঞ্চালন হবে না। আমরা যদি একমত হই বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর। তাহলে যে সাইজের বন্দর আছে, যে সাইজের হৃদপিণ্ড আছে ওই সাইজের চলে না। এ হৃদপিণ্ড বিশ্ব সাইজের হতে হবে। তাহলে এটা পাম্প হবে, যেটা সারা বাংলাদেশ জুড়ে অর্থনীতি সচল করবে, তার নাড়ি দিয়ে উপরের দিকে যাবে। সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাবে। আবার সারা দেশের জিনিস এখান দিয়ে বিদেশে চলে যাবে। এটা হলো হৃদপিণ্ডের কাজ, বন্দরের কাজ। বন্দর আরও আছে। কিন্তু এটা কেন্দ্রীয়, সবচেয়ে বড়। এখান থেকেই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রিত হবে। আমরা বললাম পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছে তাদের ডাকো। দেখলাম যে আগেই ডাকা হয়ে গেছে। কিন্তু কাজটা হচ্ছে না। বারে বারে সবার কাছে আবেদন করছি এটা তাড়াতাড়ি করে দাও। যত দিন যাবে আমরা এ হৃদপিণ্ডকে আর স্থাপন করতে পারবো না। আমাদের যে সুযোগ আছে ওই সাইজের হৃদপিণ্ডকে যে সাইজের কল্পনা করি এটা পরিবর্তন না করে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তন সম্ভব না। তার সঙ্গে আবার যোগ করলাম এটা হৃদপিণ্ড শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আশপাশের দেশগুলোর জন্যও সংযুক্ত। যে কারণে নেপালের কথা বললাম, ভুটানের কথা বললাম, সেভেন সিস্টার্সের কথা বললাম। সবার জন্য হৃদপিণ্ড একটাই। নেপালের জন্য হৃদপিণ্ডই নেই। কাজেই আমাদের হৃদপিণ্ড দিয়ে তাদেরও চলতে হবে। আমরা তাকে সংযুক্ত করতে চাই। আমাদেরই লাভ। তাদেরও লাভ। এমন নয় যে এটা মেহেরবানি করছি, মেহেরবানির বিষয় নয়। এ হৃদপিণ্ডে যদি সংযুক্ত হয় সেও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। ভুটান সংযুক্ত হলে সেও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। সেভেন সিস্টার্স যদি সংযুক্ত হয় তারাও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। এ হৃদপিণ্ডকে বাদ দিলে চললে যারা এটাকে বাদ দেবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রক্ত সঞ্চালন হবে না সেখানে, অর্থনীতির সঞ্চালন হবে না। এটা তাদেরও কাম্য নয় আমাদেরও কাম্য নয়। আমরা চাই সবাই মিলে এ বন্দর থেকে সঞ্চালনটা পাই। অর্থনৈতিক শক্তিটা পাই।

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত  ও গর্বিত প্রধান উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শনে এসেছেন। যদিও উনার শৈশব থেকে বন্দরকে দেখেছেন। গত আট মাসে আমি বহুবার এখানে এসেছি। যখনি বন্দরের প্রকল্প নিয়ে গেছি প্রধান উপদেষ্টা একবাক্যে পাস করে দিয়েছেন। উনার মমত্ববোধ আছে বন্দর নিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়ছে। আশাকরি প্রধান উপদেষ্টা আবার আসবেন, আমাদের সময় দেবেন। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, ছয় মাস পরে দেখবেন বন্দর অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। আলাদা পোর্ট রোড দরকার আলাদা। মাল্টি মডেল কমিউনিকেশন থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বহর এরপর সোজা চলে আসবে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। সেখানেই কোটি মানুষের স্বপ্ন কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল হস্তান্তর, মহানগরীর জলাবদ্ধতা সম্পর্কিত ব্রিফিং, অক্সিজেন টু হাটহাজারী সড়ক উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্রিফিং ও আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।   

এরপর চবি সমাবর্তনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, চবির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অংশ নেবেন। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ডক্টর অব লেটারস (ডি-লিট) ডিগ্রি দেওয়া হবে এবারের সমাবর্তনে।  

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সকাল ৯টা ২১ মিনিটে চট্টগ্রামে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ৯টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৫ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।