ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক রপ্তানির ৮৩ শতাংশই ইউরোপ-আমেরিকায়, বাজার বাড়ছে জাপানে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৮, মে ১২, ২০২৫
পোশাক রপ্তানির ৮৩ শতাংশই ইউরোপ-আমেরিকায়, বাজার বাড়ছে জাপানে ফাইল ছবি

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক রপ্তানির ৮৩ শতাংশই হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে।

বাকি ৩৪ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায়—যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, ১১ দশমিক ১২ শতাংশ ও ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ সময়ে অপ্রচলিত বাজারেও তুলনামূলক ভালো রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে জাপান হয়ে উঠছে পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনায় বাজার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত সময়ে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ২৬৪ কোটি এক লাখ ডলারের। এর মধ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৬২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পোশাক। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬২৩ কোটি ডলারের, যুক্তরাজ্যে ৩৬২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের এবং কানাডায় ১০৫ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পোশাক।

পোশাক রপ্তানির এই প্রধান চার বাজার অর্থাৎ ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৩ দশমিক ৪১ এবং ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে। উল্লিখিত ১০ মাসে মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তুলনামূলক কম রপ্তানি হওয়া দেশেও জুলাই-এপ্রিল সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এসব অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৫৪৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ‍এর মধ্যে তুরস্ক, মেক্সিকো, ব্রাজিল ও ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। আবার মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রাশিয়ায় রপ্তানি কমেছে।

অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে জাপান। জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি একশ কোটি বা এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণে মনোযোগ দিয়েছে। এরই ফলে এ ধরনের সাফল্য আসছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে রপ্তানি আয়।

তৈরি পোশাক রপ্তানির এই চিত্র দেশের শিল্পখাতের সামর্থ্যের প্রতীক বলে মনে করেন নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো করছি। আগামীতেও আশা করি ভালো করবো।

ফজলুল হক মনে করেন, জাপানে রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের ওপরের উঠে আসা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে তারই প্রতিফলন। জাপান মূল্য ও মানের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। দেশটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটি পিস পরিদর্শন করে গ্রহণ করে। মূল্যের ক্ষেত্রেও ভালো ও সৎ। জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো আমরা পোশাক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স থেকে শুরু করে মান ও লেনদেনে দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, অপ্রচলিত অন্যান্য দেশের মধ্যে সেসব দেশে রপ্তানি বাড়ছে, যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের উদ্যোক্তাদের মানসিক ও  যোগাযোগ আছে। যেমন তুরস্কের সঙ্গে আমাদের নানা দিক থেকে ভালো যোগাযোগ আছে। আমরা এখনো সেই যোগাযোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছি।  একইভাবে ব্রাজিল ও ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। এসব দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগামীতেও বাড়তে থাকবে।

বিকেএমইএর এই সাবেক সভাপতি বলেন, অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে হলে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ভার্চুয়াল যোগাযোগের পাশাপাশি সশরীরে মার্কেটিংয়ের জন্য যেতে হবে। এটা করা গেলে আমাদের যে সক্ষমতা আছে, দক্ষতা আছে তা দিয়ে অপ্রচলিত বাজারেও আরও ভালো করতে পারবো।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকানির্ভর। কোনো একটি অঞ্চলে সমস্যা হলে আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পে ঝাঁকুনি লাগে। এতে পুরো রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যে নাড়া দিয়েছে এতেই আমরা কেঁপে উঠেছি। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ানো গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো যেতো। তাহলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে ইতিবাচক থাকতে পারতাম। এর সুযোগও রয়েছে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জাপান বড় বাজার। সেখানে বাজারের খুব ছোট্ট অংশ আমরা রপ্তানি করতে পেরেছি। এখনো বড় অংশ পারিনি। অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের রপ্তানি ৬০ কোটি ডলারের বেশি। এখানে বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা পারছি না বাজার নিয়ে গবেষণার অভাব, তথ্য উপাত্ত না থাকা এবং বাজারের সম্প্রসারণে প্রমোশনাল কার্যক্রম বাড়াতে না পারার কারণে।

মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে আমাদের মনোভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। ব্যবসা করলেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা ইউরোপে যেতে হবে-এমন চিন্তা বাদ দিতে হবে।

জেডএ/জেএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।