ঢাকা: বৈশ্বিক শুল্ক অস্থিরতা ও বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটে শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও উদ্ভাবনকে সামনে রেখে রাজধানীতে শুরু হয়েছে ১৮তম বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো।
রোববার (১২ মে) সকালে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) শুরু হওয়া এ দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১৩টি দেশের ৫৭টি প্রতিষ্ঠান। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, স্পেন, ইতালি, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধি ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭ দশমিক ৪৯, ভিয়েতনামের ১৩ দশমিক ৯৬ এবং চীনের ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমাদের এ প্রবৃদ্ধি এমন এক সময়, যখন ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিকভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। অর্থাৎ অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার ও শুল্ক নীতির মাঝেও বাংলাদেশ তার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমার মতে, বাণিজ্য আলোচনার টেবিলে আমাদের শক্তি হবে আমাদের শিল্পের দক্ষতা উন্নয়ন, স্থায়িত্ব ও উদ্ভাবনে অগ্রগতি। কারণ, আমাদের যেমন বাণিজ্য অংশীদারদের প্রয়োজন, তেমনি তাদের ভোক্তাদেরও আমাদেরকে প্রয়োজন।
এলডিসি ভুক্ত হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’ এবং ‘জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্সের (জিএসপি) আওতায় শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকলেও, ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর তা অব্যাহত থাকবে না। যদি বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা অর্জনে ব্যর্থ হয়, তবে ২০২৯ সাল থেকে ইউরোপে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে—যেখানে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ দশমিক ১৫ শতাংশ যায়।
এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের এক্সপোতে সকল আলোচনা দক্ষতা, উদ্ভাবন ও প্রস্তুতির বিষয়টি মাথায় রেখে আয়োজন করা হয়েছে। এবারের আয়োজনের মূল বার্তা হলো— পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া, যার মাধ্যমে ২০২৯ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য শিল্পকে প্রস্তুত করা হবে।
দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি বিশেষ প্যানেল আলোচনা। প্রথম দিনে হয়েছে ওয়াশিং প্রক্রিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের অগ্রগতি শীর্ষক আলোচনা। দ্বিতীয় দিনে হবে বাংলাদেশি ডেনিম ট্রেসেবিলিটি নিয়ে আরেকটি প্যানেল আলোচনা।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন—আব্দুস সামাদ (পরিচালক, ওয়েল অফ ওয়াশিং), আরিফ লাভু (সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, রুহরোজ আরবিটি লিমিটেড), জুলি ডেভিস (জিএম–প্রসেসিং ইনোভেশন, দ্য উলমার্ক কোম্পানি), কামাল উদ্দিন মিয়া (সিওও, বিটিপি গ্রুপ), মারকো ভলপি (বিক্রয় প্রধান, ব্লুসাইন টেকনোলজিস), ফরহাদ হোসেন (স্বত্বাধিকারী, পিওর কেমিক্যালস), রাকিব ইমতিয়াজ (বিজনেস ম্যানেজার, এলসি ওয়াইকিকি), রেজা-ই-রাব্বি (সিওও, ভার্টেক্স ওয়্যার) ও সোহেল রানা (সিইও, ডিজাইনার ফ্যাশন ও ডিজাইনার ওয়াশ লিমিটেড)।
এছাড়া স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেডের গার্মেন্ট ইউনিটের অপারেশন প্রধান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ডেনিম নিয়ে একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন দেন। এক্সপোর আকর্ষণীয় অংশ হিসেবে রয়েছে ‘ফ্যাশন ট্রেন্ড জোন’, যেখানে দেশের উদ্ভাবিত উন্নতমানের ডেনিম ও প্রযুক্তিনির্ভর কাপড় প্রদর্শন করা হচ্ছে।
পিআ/এমজে