খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদ শূন্য হওয়ায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) তাদের অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও প্রথা অনুযায়ী, উপাচার্যের অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ ডিন দায়িত্ব পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলে তিনদিনেও চূড়ান্ত হয়নি কে পাচ্ছেন কুয়েটের অ্যাক্টিং ভিসির দায়িত্ব।
এ বিষয়ে রোববার (২৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভূঞা বাংলানিউজকে বলেন, অভিভাবকহীন আছে কুয়েট। আমরা অপেক্ষায় আছি কাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নতুন প্রশাসনে কে আসছেন এ নিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে চলছে আলোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আসনে পরবর্তীতে কে বসতে যাচ্ছেন তা নিয়েও ইতোমধ্যে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কুয়েট অভিভাবকহীন থাকতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগদান সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য সম্পন্ন কোনো শিক্ষাবিদকে যেন নিয়োগদান করা না হয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সমাজের কাছে, তথা সার্বিক বিচারে গ্রহণযোগ্য, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই ভিসি হিসেবে নিয়োগদানের দাবি জানান তারা।
এদিকে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের নাম ভিসি হওয়ার জন্য জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সিভিল ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক হামিদুল বারী, সিএসই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক এম এম এ হাসেম, যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কাদের, পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহজাহান আলী, তড়িৎ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক নুরুন্নবী মোল্লা।
শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কুয়েটের ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রোভিসি শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দেওয়ার পর উত্তপ্ত ক্যাম্পাস শান্ত হয়।
এর মধ্যে কুয়েটের চার শিক্ষার্থী শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে বহিরাগতদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন। তারা হলেন- ওবায়দুল্লাহ, গালিব, মোহন ও মুজাহিদ। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ১০টায় কুয়েট ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, হামলাকারীরা সংখ্যায় ১২ থেকে ১৫ জন ছিল। হামলাকারীরা ‘ভিসি মাছুদকে কেন নামিয়েছিস’ বলে মারধর করে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বার বার আমাদের ওপর হামলা হলেও অপরাধীদের সাজা না হওয়া এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কুয়েটের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কুয়েটের সহ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি বহিরাগতদের সঙ্গে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে কয়েক দফায় জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের এক পর্যায়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধসহ হল খালি করার সিদ্ধান্ত হয়। রমজান ও ঈদের ছুটির পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দুই রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেওয়ার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৪ এপ্রিলের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ২ মে হল ও ৪ মে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সর্বশেষ শিক্ষার্থীরা ২১ এপ্রিল বিকেল ৩টা থেকে ভিসি মাছুদের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করলে ২৩ এপ্রিল রাত ১টায় ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানান ইফজিসির এক সদস্য। এরপর ওই রাত থেকেই অনশন ভঙ্গ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভিসি-প্রোভিসির অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২৫ এপ্রিল। অব্যাহতির পর রোববার (২৭ এপ্রিল) কুয়েট খোলার প্রাক্কালে শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে চার শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুনরায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এমআরএম/আরবি
Rinku