ঢাকা, শনিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সড়ক যেন ফুলের তোরণ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:২৭, মে ১৬, ২০২৫
সড়ক যেন ফুলের তোরণ গাছে গাছে ফুল ছড়ানো অপূর্ব এক সড়ক। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: এই পথটি চলে গেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতি বহন করে সুদূরে। সেই পথটি আজ রক্ত লাল! কৃষ্ণচূড়ার তাজা উন্মাদনায় ছড়ানো।

এ পথে পাশেই বধ্যভূমি! এটি স্পর্শ করেই কৃষ্ণচূড়া যেন আরো অধিকতর লাল হয়ে নিজেকে সাজিয়েছে।

চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গলের বিশেষ এক পিচঢালা পথের বৃক্ষময় সৌন্দর্য এটি। ভানুগাছ রোডের বধ্যভূমি থেকে বিটিআরআই চৌরাস্তা এই টুকরো পথটুকু কিন্তু আগে এরূপ ছিল না। এ পথটিকে সুসজ্জিত করে তুলতে এগিয়ে এসেছিলেন বরেণ্য এক বৃক্ষপ্রেমী। ফুল, বৃক্ষ আর প্রকৃতিকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন যিনি।

আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে সেই বৃক্ষপ্রেমীর উদ্যোগটি আজ শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য বিকাশের অন্যতম স্থান হিসেবে মুখরিত হয়েছে। এই সেই ফুলপ্রেমী মানুষটি নাম গোলাম মোহাম্মদ শিবলী।

ভাড়াউড়া চা বাগানের ফাঁড়ি বাগান ভুরভুরিয়া চা বাগানের মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। এটি শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। বধ্যভূমি ৭১ থেকে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিটিআরআই পয়েন্ট পর্যন্ত। সড়কের দু'পাশে একের পর এক বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় ফুলের গাছ। দূর থেকে দেখা যায় লাল, হলুদ, সোনালি ফুলের অপরূপ দৃশ্য। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়াসহ আরো অনেক প্রজাতির ফুল গাছ।

সারি সারি এসব গাছে লাল, হলুদ, সোনালি শোভায় মেলে ধরেছে তাদের আপন আপন সৌন্দর্য। এ পথে চলাচলকারী পথচারী, পর্যটক, দর্শনার্থী, প্রকৃতিপ্রেমীরা ফুলে ফুলে ভরা এসব দৃশ্য দেখে হন মুগ্ধ। কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তুলতে। গাছে গাছে ফুটে থাকা রক্তলাল, হলুদ, সোনালিসহ হরেক প্রজাতির গাছের ফুলগুলো সৃষ্টি করেছে এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। এ ফুলের গাছ গুলো সমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে প্রকৃতিতে। যেন লাল, হলুদ, গোলাপি, হলুদ আর সোনালি রঙে রাঙিয়েছে প্রকৃতি। রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া পর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ফুলটি হলো ক্যাসিয়া জাভানিকা। এর ফুলের উজ্জ্বল রং বহুদূর থেকে ফুলপ্রেমীদের মুখরিত করে রাখে।

শোভাময় গাছ হিসেবে এর উজ্জ্বল হলুদ ফুল চা বাগানের এই পথগুলিকে শোভিত করে রেখেছে। হলুদে রঙের রাধাচূড়া ফুল তার দীপ্তিময় শোভা দিয়ে ফুলপ্রেমীদের দারুণভাবে মোহিত করে রাখে। প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি রাধাচূড়া ফুলের সৌন্দর্য। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে এর জুড়ি নেই। আজ থেকে ৯/১০ বছর আগে  বৃক্ষপ্রেমী গোলাম মোহাম্মদ শিবলী ভুরভুরিয়া চা বাগানের ওই সড়কের দু'পাশসহ চা-বাগানের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৭০০-৮০০ গাছ লাগিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি চা-বাগানের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। সেই গাছগুলো বর্তমানে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে শোভা বর্ধন করে রেখেছে।  

বৃক্ষপ্রেমী গোলাম মোহাম্মদ শিবলী পেশায় একজন অভিজ্ঞ সিনিয়র টি-প্লান্টার। চায়ের সাথে কাটিয়েছেন সারাটি জীবন। পেশায় চা বাগানের সাথে জড়িত হয়েই প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান। সেই থেকে শ্রীমঙ্গলের চিরসবুজ প্রকৃতির এক আপনজন তিনি। যুক্ত আছেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান হিসেবে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিজের ভালো লাগা থেকেই আমি গাছ লাগাই। ১০১৫-২০১৬ সালে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু প্রভৃতি নানাজাতের ফুলের গাছ রাস্তার দু’পাশে লাগিয়েছিলাম। এছাড়াও ক্যাসিয়া জাভানিকা নামক আরো একটি দারুণ সুন্দর ফুলের গাছও বিশেষ বিশেষ স্থানে লাগিয়েছি। এগুলো ধীরে ধীরে বড় হলে আজ ফুলে ফুলে অন্যরকম এক সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে। আমি প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি।

গাছ আমাদের প্রকৃতির সবচেয়ে বড় বন্ধু। প্রকৃতির বড় অংশই হলো গাছ। আর প্রকৃতি ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো বলে জানান এই প্রকৃতির বন্ধু।    

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।