ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বিজেপির গীতা পাঠ, কংগ্রেস পাঠ করল ভারতীয় সংবিধান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
বিজেপির গীতা পাঠ, কংগ্রেস পাঠ করল ভারতীয় সংবিধান

কলকাতা: বড়দিনের আগের দিন একাধিক বড় ‘ইভেন্ট’ হয়ে গেল কলকাতায়। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি শীতের মৌসুমেও হয়েছে সরগরম।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) একদিকে অখিল ভারতীয় সংস্কৃতি পরিষদের উদ্যোগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত হয়েছিল ‘লাখো কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠান।

এই গীতাপাঠ অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এতে রাজনীতির রং লেগেই গিয়েছে। বলা হচ্ছে, বিজেপির আয়োজন। অপরদিকে কংগ্রেস পাঠ করল ভারতের সংবিধান।

এসবের মধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হলেন ভারতের সান্তাক্লজ। এসবের বাইরে একই দিনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দকে ছাড়াই সহ-উপাচার্যের নেতৃত্বে যাদবপুরে হয়ে গেল সমাবর্তন অনুষ্ঠান।

এমনকি ২০১৯-২২ সালের টেট (শিক্ষক যোগ্যতার পরীক্ষা) শত শত যোগ্য চাকরিপ্রার্থী রাজপথে আন্দোলনের মধ্যেও একই দিনে রাজ্যে নতুন করে হয়ে গেল ২০২৩ সালের টেট পরীক্ষা। ৭৭৩ কেন্দ্রে এবারে পরীক্ষা দিলেন ৩ লাখের বেশি শিক্ষক। কিন্তু পরীক্ষা তো দিলেন। পাস করলে চাকরি পাবেন তো? এ প্রশ্নে তাদের উত্তর, নিশ্চয়তা নেই, তবু আশাবাদী।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালের আলো ফুটতেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। শিয়ালদহ, হাওড়ার মতো স্টেশনগুলিতে ট্রেন থেকে নেমে ব্রিগেডের দিকে রওনা দেন গীতাপ্রেমীরা। হাজির ছিলেন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পণ্ডিত, পুরোহিতরা। অনুষ্ঠান শুরু নজরুল গীতি আর উলুধ্বনি দিয়ে। এরপর পাঁচধাপে গীতা পাঠ চলছে বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে।

আয়োজকদের দাবি, গীতাপাঠে এক লাখেরও বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছে। যে কারণে নাম উঠবে গিনেস বুকে। যদিও জানা গেছে, একলাখ তো দূরের কথা, ৫০ হাজার লোকের জমায়েত হয়নি। কারণ, লাখ লাখ মানুষের বদলে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে মাত্র ৫০-৬০ হাজার।

এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তিনি আসবেন কথাও দিয়েছিলেন। যদিও দিন কয়েক আগে পিএমও অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি গীতাপাঠ করতে আসবেন না।

বিরোধী দলগুলির দাবি, এত বড় ময়দান ভরানো সম্ভব না বুঝেই এই অনুষ্ঠান থেকে সরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে নিজে আসতে না পারলেও গীতাপাঠ কর্মসূচির আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। শুভেচ্ছা বাণীও পাঠিয়েছিলেন তিনি।

তবে গীতা পাঠের বিষয়ে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, স্বামী বিবেকান্দর বাণী উদ্ধৃত করে বলেছেন, স্বামীজি বলতেন, গীতা ছেড়ে ফুটবল খেলা উচিত। স্বামীজি মনে করতেন গীতা পাঠে মন ভালো থাকে। ফুটবল শরীর-মন দুটোই ভালো রাখে। ফলে ধর্মের বিভাজনে রাজনীতি চাই না। আমরা তাই ফুটবলের পক্ষে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, কুরুক্ষেত্রের মাঠে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে বাণী শুনিয়েছিলেন, তাই গীতা। জয় হয়েছিল পাণ্ডবদের। পশ্চিমবঙ্গ আজ কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাই এই আয়োজন।

এসবের মধ্যে ব্রিগেডে বিজেপির গীতা পাঠ কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দুর্গাপুরে কংগ্রেস পাঠ করেছে ভারতের সংবিধান। কংগ্রেসের সংবিধান পাঠকে সমর্থন করে বিজেপিকে বিঁধলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেছেন, ভারতীয় সংবিধান সব ধর্মের ঊর্ধ্বে। ধর্মের বিভাজনে যখন রাজনীতিতে চলছে। তখন আমরা সংবিধান পাঠ করে স্মরণ করিয়ে দিলাম।

অপরদিকে, কলকাতায় এক বড়দিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম বলেছেন, আমরা সব সময় মনে করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তবে আমি মনে করি আমাদের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সান্তাক্লজ। তিনি রূপশ্রী, লক্ষীশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো ১৪টি সরকারি পরিষেবা উপহার দিয়েছেন। এখন আর অশিক্ষার জন্য কোনো নারী বঞ্চিত হয় না। অল্প বয়সে পরিবার তার কন্যার বিয়ে দেয় না। এসবই আমাদের নেত্রীর উপহার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।