কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এদিন বাংলার বিভিন্ন ঈদগাহে, জামাতের মধ্যদিয়ে নামাজ পড়ে উৎসব পালন করছেন।
তাদের দাবি, গাজার মানুষ আজ বড় অসহায়। ফিলিস্তিনিরা আজ যেভাবে ঈদ পালন করছে, তা কাম্য নয়। বিশ্বের সবার এগিয়ে আসা উচিত। নামাজ শেষে রেডরোডে সবার সঙ্গে মিলিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে ঈদের নামাজ শুরু হওয়ার আগেই হাতে ব্যানার, পতাকা এবং স্লোগান তুলে এক বিশাল মিছিল কলকাতার রেড রোডে প্রবেশ করে। প্রায় শতাধিক মুসল্লি ওই মিছিলে অংশ নেন। বড়দের পাশাপাশি অনেক শিশুরাও সে মিছিলে অংশ নেন।
মিছিলে নেতৃত্বকারী শেখ আমির বলেছেন, আজকে আমাদের খুশির দিন, আনন্দের দিন। কিন্তু ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনেদের সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারাও যাতে শান্তিতে থাকতে পারে এবং আমরা যেভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করছি, তারাও সেভাবে যেন ঈদ পালন করতে পারে, এটাই আমাদের দাবি। কিন্তু বিশ্ববাসী নিশ্চুপ হয়ে আছে। তাদের ওপর প্রচণ্ড জুলুম হচ্ছে। নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এটা কি অপরাধ নয়? ইসরায়েলের উচিত শিশুদের সঙ্গে মানবিক আচরণ দেখানো। ইসরায়েলের আক্রমণে শিশু এবং যেসব শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা পথে রাস্তায় নেমেছি। এরপর সবাই নামাজে অংশ নেন।
প্রতি বছরের মতো এবারো কলকাতার রেড রোডে অস্থায়ী ঈদগাহে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলকাতায় সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনষ্ঠিত হয়ে থাকে রেডরোডে। একইভাবে বিগত বছরগুলোর মতো নামাজ শেষে সবার সঙ্গে রেডরোডে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী লন্ডন সফর শেষ করে শনিবার রাতেই কলকাতায় ফিরে এসেছেন। তার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়েছেন তিনি। এদিন সকালে রেড রোডে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রীতি বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা সবাই পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকুন, ভালো থাকুন। আপনারা কোনো রকম দাঙ্গা করতে দেবেন না, কারণ ওদের (বিজেপি) একটাই কাজ দাঙ্গা লাগাও, আর আমাদের কাজ দাঙ্গা ঠেকানো। দাঙ্গা রুখে দিতে পারলে ওরা নিজেরাই পালিয়ে যাবে। আমার একটাই অনুরোধ, ওদের পরিকল্পনা বা চক্রান্তে কেউ পা দেবেন না। ঈদের নামাজে উপস্থিত হয়ে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা আরও বলেছেন, আমি পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে সবাইকে খুশির ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, শান্তিতে থাকুন, একতা এবং সম্প্রীতি নিয়ে থাকুন।
মমতা বলেছেন, আমরা দাঙ্গা, অশান্তি চাই না। আপনারা কোনো প্ররোচনায় পা দেবেন না। এটা ওদের (বিরোধী) পরিকল্পনা, এ খেলায় পা দেবেন না। আপনারা এটা ভাববেন না যে আপনারা একা রয়েছেন। আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। আপনাদের সঙ্গে দিদি রয়েছে, আপনাদের সঙ্গে গোটা সরকার রয়েছে। যারা চিৎকার করছে তাদের করতে দিন। ওরা উল্টোপাল্টা বলছে বলতে দিন। সময় মতো ওদের শিক্ষা দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি এবং বামদের উদ্দেশ্য করে বলেন, রাম এবং বাম আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কি হিন্দু? আমি গৌরবের সঙ্গে তাদের বলছি, আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি খ্রিস্টান, আমি শিখ। সর্বোপরি আমি একজন ভারতীয়। আপনারা (বিরোধী) কি চান? ডিভাইড অ্যান্ড রুল? কিন্তু আমরা সেটা চাই না। প্রতিটি ধর্ম-জাতি-বর্ণের মানুষদের জন্য আমাদের জীবন। আপনারা ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো।
এ সময় মমতার সঙ্গে ছিলেন,তার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, মন্ত্রী জাভেদ খান।
এবার রেডরোড, নাখোদা মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদসহ কলকাতায় ৬৭৮টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
ভিএস/জেএইচ