ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

লাল পতাকায় জড়িয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ বিদায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৪
লাল পতাকায় জড়িয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ বিদায়

কলকাতা: কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানালো পশ্চিমবঙ্গবাসী। তার শেষ যাত্রায় শামিল হলেন শাসক থেকে বিরোধী দলগুলো।

শোক মিছিলের পর তার নশ্বর দেহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার জন্য তুলে দেওয়া হলো কলকাতার নীলরতন মেডিকেল হাসপাতালে (এনআরএস)।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।  

দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্ট ভুগছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১১ বছর ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পড়া আদ্যোপান্ত বাঙালি বুদ্ধর রাজনৈতিক জীবনে কেউ কোনোদিন কালির দাগ লাগাতে পারেনি। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। যে কারণে চোখের জলে ভাসল শাসক থেকে বিরোধীরা রাজনৈতিক দলগুলো।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সন্ধ্যার পর তাকে রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন নন্দন চত্বরে আড্ডা দিতেও দেখা গিয়েছিল। মানুষের সঙ্গে তার ছিল একাত্মা।  

এর বাইরেও তার আরেকটি পরিচয় হলো - তিনি ছিলেন কবি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্য। ফলে সংস্কৃতিমনা এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শুক্রবার কলকাতার রাজপথে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউর বাসভবন থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার পিসওয়ার্ডে। রাতভর শীতাতপ ঘরে সংরক্ষিত ছিল তার দেহ।  

এরপর সকাল হতে বেলা ১১ টা নাগাদ পিসওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়(পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক ভবন)। যে ভবনের দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে একজন বিধায়ক হিসেবে বিরোধী বিধায়কদের বিরোধিতা করে রাজ্যের শাসনভার চালিয়েছিলেন।

বিধানসভায় যে জায়গায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে,  শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়েছিল তাদের মৃতদেহ, সেখানেই শ্রদ্ধা জানানো হয় বুদ্ধকে। তার কমরেড কর্মীরা তো ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়ক, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা। দল মত নির্বিশেষে সকলের উপস্থিতিতে এক আবেগঘন মুহূর্তে বিদায় জানান পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

গতকাল বাসভবনের শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিধানসভাতেই শেষ শ্রদ্ধা জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সহ অনেকে। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি বিধায়করা। বিধানসভার গেটে অঝোরে কান্নায় ঝড়ে পড়েন কর্মী সমর্থকরা।

সেখান থেকে তার নশ্বর দেহ নিয়ে আসা হয় সিপিআইএমের সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফ্ফ‌র আহমদ ভবনে। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ শায়িত রাখা হয় তার শবদেহ। সেখানেই শ্রদ্ধা জানান তার অনুরাগীরা।  

কারো হাতে ছিল ফুলের মালা, ফুলের তোড়া বা একটা গোলাপ ফুল। আলিমুদ্দিনের শেষ শ্রদ্ধা জানালেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মুটিবদ্ধ হাত উপরে তুলে শেষ শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবাসী।  

এ সময় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সামনে থেকে লম্বা লাইন ছাড়িয়ে যায় শিয়ালদা স্টেশনের কাছে। বহু মানুষ রোদ মাথায় সড়কের ধারে অধীর আগ্রহ নিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে  অপেক্ষা করেন।

আলিমুদ্দিন থেকে বেরিয়ে তার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় দীনেশ মজুমদার ভবনে। এই ভবনে পরিচালিত হয় বামেদের যুব সংগঠনের রাজনীতি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং কমরেড দীনেশ মজুমদার এই দুইয়ের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ডিওয়াইএফআই( যুব সংগঠন) ।

এরপর তার শেষ যাত্রায় শোক মিছিলে শামিল হল আপামর বঙ্গবাসী। সামনে রাখা হয় বিশাল ব্যানার। তার পরের সারিতে রাখা হয় ৮০টা অর্ধনমিত লাল পতাকা। মৃত্যুকালে যেহেতু তার বয়স ৮০ ছিল। সেই অনুযায়ী রাখা হয়েছিল লাল পতাকা। এরপর ছিলেন মানুষের সারি। সবশেষে ছিল শববাহী গাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নশ্বরদেহ।

তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি। যে  কারণে আগামী চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য তিনি মরণোত্তর দেহ দান করে গিয়েছিলেন। তাই শোক মিছিলের পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয় এনআরএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৪
ভিএস/এসএএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।