জার্মান সংসদের ছোট দল গ্রিন পার্টির কাছে নতি স্বীকার করতে হলো সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জার্মান সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ/ সিএসইউ) ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এসপিডি)। গ্রিন পার্টি বেঁকে বসায় এই দুই দলের দ্বি-দলীয় সরকার গঠন প্রক্রিয়াও থমকে গিয়েছিল।
সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর ঋণসীমা বৃদ্ধির বিল পাশে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠার জন্য সিডিইউ ও এসপিডি জোট গ্রিন পার্টির দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে জার্মানির ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্স রোববার (১৬ মার্চ) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার দল গ্রিন পার্টির কিছু দাবি মেনে নিলেও তার দল কখনো গ্রিন পার্টি হয়ে যাবে না।
গ্রিন পার্টির দাবি অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে জার্মানির ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর প্যাকেজ তহবিল (বাজেট) থেকে পরিবেশ সুরক্ষা ও সংরক্ষণে জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী সিডিইউ/সিএসইউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এসপিডির সাথে জোট সরকার গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দ্বিদলীয় জোট, সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ঠ হলেও বর্তমান সংসদে ও নতুন সংসদে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সদস্য তাদের নেই।
জার্মান গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এবং ঋণসীমা শিথিল করতে সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়াজন, যার জন্য সংসদ (বুন্ডেসটাগ) ও ফেডারেল কাউন্সিলে উচ্চকক্ষ (বুন্ডেসরাট) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।
জার্মান গণমাধ্যম জানায়, নতুন সরকার গঠনের আগে চলমান সংসদেই সিডিইউ/ সিএসইউ ও এসপিডি এবং গ্রিন পার্টি একত্রে এই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে। সংবিধানও সংশোধন করতে পারে। কিন্তু নতুন সংসদে এবার গ্রিন পার্টি মাত্র ৮৫টি আসন ও এসপিডি ১২০টি আসন লাভ করায় তাদের পক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন পাওয়া সম্ভব নয়। মুসলিম ও অভিবাসী বিরোধী দল এএফডি ১৫২ টি ও ৬৪টি আসন পাওয়া বামদলগুলো একত্রে এক-তৃতীয়াংশ ভোটে এই ঋণসীমা তুলে দেওয়ার বাজেট প্রস্তাব আটকে দিতে পারে।
তবে এমন কথা সিডিইউ ও এসপিডির নেতারা মুখে স্বীকার না করে বলছে, রাশিয়ার সামরিক হুমকি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত পররাষ্ট্রনীতির কারণে নতুন সংসদ গঠনের আগেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
এছাড়া গ্রিন পার্টি যদি একমত না হতো, তাহলে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনার এই বাজেট ব্যর্থ হতো এবং অন্যান্য খাতে বড় বাজেট কাটছাঁট করতে হতো। এমনটি তখন নতুন সরকার গঠনও অনিশ্চিয়তার মুখে পড়তো।
প্রসঙ্গত, জার্মান সরকার সংবিধান অনুযায়ী তাদের নিজস্ব জিডিপির কেবল দশমিক ৩৫ শতাংশ সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ঋণ নিতে পারে। এমনকি জার্মানির ১৬টি রাজ্যের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ জার্মানির জিডিপি ১০০০ টাকা হলে মাত্র ৩৫ টাকা সেখান থেকে ঋণ হিসেবে নিতে পারবে সরকার। জার্মান সরকার মূলত ব্যক্তির কর ও শুল্ক, রপ্তানি আয় থেকেই রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ করে থাকে।
৫০০ বিলিয়ন ইউরো যেভাবে ব্যয় হবে:
নতুন সরকার তাদের প্রস্তাবিত ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর তহবিল থেকে ১০০ বিলিয়ন ইউরো রাজ্য সরকারগুলোকে দেবে, যা স্থানীয় পর্যায়ে তাপ ও জ্বালানি পরিকল্পনার জন্য ব্যবহার করা হবে। গ্রিন পার্টির চাপে আরও ১০০ বিলিয়ন ইউরো জলবায়ু সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। বাকি ৩০০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে একটি বড় অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা হবে। এই তহবিল ১২ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। আর ৩ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা রাখা হয়েছে ইউক্রেনের জন্য।
জার্মান গণমাধ্যমের খবর মতে, আগামী শুক্রবার তহবিল সংক্রান্ত বিলটি পাশের জন্য জার্মানির বুন্ডেসরাট (উচ্চকক্ষ) অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সংসদ (বুন্ডেসটাগ) অধিবেশনের তারিখ আগামী মঙ্গলবার জানানো হতে পারে। এরপরই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন সংসদ ও সরকার গঠিত হবে।
রাজনীতি ছোট দলের এমন গুরুত্ব সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রাশেদুল আলম বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলেই কেবল সংসদ প্রাণবন্ত থাকে। সংসদ প্রাণবন্ত থাকলে সেখানে সরকারকে রাষ্ট্রীয় সকল সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনা করতে হয়। আর বিল বা সিদ্ধান্ত পাশে ভোটের প্রয়োজন হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যও সরকারকে সকল দল ও মতের নেতাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্যই পশ্চিমা দেশে গণতন্ত্র এতো শক্তিশালী ও ভোটারদের গুরুত্ব এতো বেশি। সেখানে সরকারকেও সকল দল ও মত-পথকে তোয়াজ করে চলতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক