হঠাৎ করেই পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের একটি প্রধান নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গেছে। যার ফলে ‘মাঝারি ধরনের বন্যা’ দেখা দিয়েছে সেখানে।
মঙ্গলবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পারমাণবিক প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটল।
হঠাৎ এই বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করেছে আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের জেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসনের একজন মুখপাত্র বলেন, ভারত ঝিলম নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি ছেড়ে দিয়েছে। যার কারণে মাঝারি বন্যা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঝিলাম নদীর কাছাকাছি এলাকায় যাওয়া এড়াতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এছাড়া গবাদি পশুরা যেন নদীর তীরে চলে না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আকস্মিক এ বন্যার খোঁজ নিতে মুজাফফরাবাদ পরিদর্শন করেছেন বার্তাসংস্থা আনাদোলুর সংবাদদাতা। ঝিলম নদীর পানির তীব্র প্রবাহ দেখেছেন তিনি। সেখানে সেতুর ওপর বিপুল সংখ্যক বাসিন্দাকে জড়ো হতেও দেখেছেন।
উল্লেখ্য, ঝিলম নদী ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে আজাদ কাশ্মীর হয়ে পাঞ্জাবে প্রবাহিত হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলাম।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দুনিয়া নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে অবহিত না করেই নদীর পানি বেশি পরিমাণে ছাড়ছে ভারত। এরপর থেকে হু হু করে পানি ঢুকছে ঝিলম নদীতে। পানি বেড়ে আজাদ কাশ্মীরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার বিষয়ে সতর্ক করতে মসজিদ থেকে স্থানীয়দের মাইকিং করা হয়েছে। হঠাৎ বন্যায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তানের এই অভিযোগের বিষয়ে বা ঝিলম নদীর সর্বশেষ জলস্তর সম্পর্কে ভারত কর্তৃক কোনো বিবৃতি জারি করা হয়নি।
এর আগে পহেলগাঁওকাণ্ডে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানকে সিন্ধুর এক বিন্দু পানিও দেওয়া হবে না মর্মে হুমকি দেয় ভারত। পাকিস্তানের পাল্টা জবাব, সিন্ধুর প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা করা হলে এটিকে তারা ‘পানিযুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর সেই অনুযায়ী (সামরিক) ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমন উত্তেজনার মধ্যে ভারত থেকে পানি ঝিলম নদী দিয়ে হু হু করে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করল আজাদ কাশ্মীরে।
পহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবারের হামলাকে নয়াদিল্লি ‘সীমান্তের বাইরের’ সংযোগসহ একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং কোনো তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
তবে ইসলামাবাদ এই হামলায় পাকিস্তানের কোনো যোগসূত্রতা নেই জানিয়ে একে ভারতের সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, এমন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় তারাও উদ্বিগ্ন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
তবে সে কথায় কান না দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে, একমাত্র স্থলপথও বন্ধ করে দিয়েছে।
পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে এবং ভারতীয় মালিকানাধীন বা পরিচালিত বিমান সংস্থাগুলির জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ শনিবার বলেছেন, কাশ্মীর হামলার ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত চায় ইসলামাবাদ এবং হামলার পর ভারতের ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা যাচাইযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত অভিযোগ এনেছে।
সূত্র: আনাদোলু
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসএএইচ
Sayed Al Hasan Shimul