ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইল আসক্তি, বকা দেওয়ায় অভিমানে বাসা ছাড়ে সাইম!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
মোবাইল আসক্তি, বকা দেওয়ায় অভিমানে বাসা ছাড়ে সাইম!

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করতো শিশু রাইমুল হাসান ওরফে সাইম (১২)। বাবার মোবাইলে গেমস খেলা, কার্টুন দেখাসহ মোবাইল আসক্তি তৈরি হয়ে যায় তার।

একদা সকালে গার্মেন্টসকর্মী বাবা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার কাছে মোবাইল রেখে যাওয়ার বায়না ধরত প্রায়ই। কিন্তু বাবা তার সন্তানকে মোবাইল আসক্তির জন্য প্রায়ই বকা দিতেন।

বাবার বকুনি এবং তাকে মোবাইল দিয়ে না যাওয়ায়, একদিন অভিমান করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে শিশু সাইম। শুধু তাই না, বাসায় আর না ফিরতেও ফন্দি আটে মনে মনে।

সেই অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকা থেকে ঘুরতে ঘুরতে ঢাকার শনির আখড়া এলাকায় এসে স্থানীয়দের শিশুটি বলতে থাকে, তার বাবা-মা মারা গেছে। এভাবে সেখানে নানা জনের আশ্রয়ে কখনো হোটেল, কখনো মুদি দোকান, আবার কখনো ব্যাগের কারখানায় কাজ করে ১২ বছরের ছেলেটি।

এদিকে প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও সন্তানের খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাবা-মা। পুলিশের সাহায্য চেয়েও সন্ধান মিলছিল না শিশু সাইমের।  

অবশেষে নানা চেষ্টার পর ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় শিশু সাইমের নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন তার বাবা গার্মেন্টকর্মী রবিউল ইসলাম।

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ অক্টোবর বিকেলে তার সন্তান সাইম (১২) স্থানীয় দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সে আর ফিরে আসেনি। পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না পেয়ে জিডি করে তিনি।

জিডি করার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সন্তানের খোঁজ পাচ্ছিলেন না বাবা রবিউল ইসলাম। এরপর উপায় না দেখে ছেলেকে উদ্ধারে পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের শরনাপন্ন হন তিনি।

এসপি মনিরুল জিডির প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিবিআইর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। সেই অনুযায়ী, টিমসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেন এসআই মাজহারুল।

তদন্তকালে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ, স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের ছবি প্রচারসহ নানাভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে পিবিআই। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিখোঁজের দীর্ঘ ৪ মাস পর ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে শনির আখড়া, গোবিন্দপুরসহ আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

অবশেষে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গোবিন্দপুর এলাকার জনৈক শফিকুল ইসলামের আশ্রয় থেকে শিশু সাইমকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান এসআই মাজহারুল ইসলাম।

উদ্ধারের পর শিশু রাইমুল হাসান সাইমকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআইর এই কর্মকর্তা জানান, মোবাইলে গেমস খেলা, কার্টুন দেখাসহ মোবাইল কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি সাইমের তীব্র আকর্ষণ রয়েছে। তার বাবা কাজে যাওয়ার সময় সে প্রায়ই তার বাবার কাছে মোবাইল বাসায় রেখে যেতে বায়না ধরত।

কিন্তু বাবা রবিউল মোবাইলে গেমস খেলার জন্য প্রায়ই তাকে বকা দিতেন এবং বাসায় মোবাইল রেখে যেতেন না। এর ফলে প্রচণ্ড অভিমান থেকে গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সাইম।

এসআই মাজহারুল বলেন, বাসা থেকে বেরিয়ে শিশু সাইম রাস্তাঘাট তেমন না চেনায়, একপর্যায়ে পায়ে হেটে কাচঁপুর চলে যায়। সেখান থেকে শনির আখড়া এলাকায় এসে স্থানীয়দের জানায়, তার বাবা-মা মারা গেছেন। এরপর স্থানীয়দের আশ্রয়েই হোটেল, মুদি দোকন এবং ব্যাগের কারখানায় কাজ করে নিখোঁজ থাকার চেষ্টা করে দীর্ঘ চার মাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
পিএম/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।