ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ে ফুল-বিজুর মধ্যে দিয়ে বৈসাবি উৎসব শুরু

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
পাহাড়ে ফুল-বিজুর মধ্যে দিয়ে বৈসাবি উৎসব শুরু

রাঙামাটি: দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে একটু ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র বহু জাতি সত্ত্বার বসবাস।

ঈদ, পূজা-পার্বন, বৈসাবি সব উৎসব মিলেমিশে একাকার। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবির রঙ লেগেছে পাহাড়ের গায়ে।

পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বিজু। দেবী গঙ্গাকে আরাধনা হিসেবে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বৈসাবির শুভ সূচনা করা হয়। মূলত নতুন বর্ষকে বরণ এবং পুরনো বর্ষের গ্লানি মুছতে আড়ম্বর এবং মহাধুমধামের সঙ্গে এ উৎসব পালন করে পাহাড়বাসী।

চাকমাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু এবং অহমিয়াদের ভাষায় বিহু নামে পরিচিত উৎসবই বৈসাবি। প্রধান তিন সম্প্রদায়ের নামের আদ্যক্ষর নিয়েই ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় ফুল বিঝু, দ্বিতীয় দিনকে ‘মূল বিঝু’ এবং তৃতীয় দিনকে ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গোজ্যা পোজ্যা দিন’বলা হয়। এভাবেই ত্রিপুরা সম্প্রদায় প্রথম দিনকে ‘হারিকুইসুক’ দ্বিতীয় দিনকে ‘বুইসুকমা’ এবং তৃতীয় দিনকে ‘বিসিকাতাল’ নামে অভিহিত করে থাকে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষরা কাপ্তাই হ্রদে দেবী গঙ্গার উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে উৎসবের শুভ সূচনা করে।

তিন দিনব্যাপী বৈসাবির আড়ম্বর আয়োজন ছাড়াও উৎসবকে ঘিরে মেলা, জলকেলি, নাচ-গান, খেলাধূলাসহ নানান আয়োজনে মেতে ওঠে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী।

খোয়াই ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভোরবেলা উঠে ফুল সংগ্রহ করে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে পানিতে ভাসিয়ে দেই। এরপর ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিছন্ন করি এবং ঘর সাজায়। এরপর নতুন বছরের অপেক্ষা করি।

সেন্টু তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাকমা জনগোষ্ঠী অত্যন্ত আড়ম্বর আয়োজনে বিজু উৎসব পালন করি। এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা সব জাতি সত্ত্বা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

ঝিনুক ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রত্যেক বছর অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বৈসাবি উৎসব করি। আমরা আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি রীতি প্রথা মনে এ বৈসাবি করে থাকি। এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকে না।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বৈসাবি একটি সামাজিক উৎসব। আমরা মারমা সম্প্রদায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জলকেলি উৎসব পালন করে থাকি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাহাড়ে শান্তির সুবাস বইছে। পাহাড়ি-বাঙালি পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিলেমিশে বসবাস করছে। এটাই বড় সম্প্রীতি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশে যেমন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা বিকাশ করতে চাই তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক জাতি সত্ত্বার বসবাস। তাদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ হোক। সকলে মিলে-মিশে বাংলাদেশকে ভালবাসি। আমরা বাংলাদেশের শান্তির জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করবো যেমনে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই এক হয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি।

এমপি আরও বলেন, বৈসাবিতে পাহাড়ের সব সম্প্রদায় উৎসবে মেতে উঠেছে। উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো সব ভেদাভেদ ভুলে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।

বৈসাবিতে ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না, নানান রকম পাহাড়ি চালের বাহারি পিঠাপুলি, ফলমূলসহ চলে রসনাভোজের আয়োজন। আতিথেয়তায় থাকে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ পাহাড়ি বাঙালি সর্বজনের অংশগ্রহণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।