ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাবিপ্রবির সাফল্য, উটপাখির ডিম থেকে ফুটল বাচ্চা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
হাবিপ্রবির সাফল্য, উটপাখির ডিম থেকে ফুটল বাচ্চা

দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) দীর্ঘ আড়াই বছরের প্রচেষ্টায় উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।

রোববার (১৬ জুলাই) হাবিপ্রবির জেনেটিকস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল বিভাগে গিয়ে দেখা যায় আলতো ভাবে উটপাখির একটি বাচ্চা ইনকিউবেটরে হাঁটাহাঁটি করছে।

চারদিন বয়সী বাচ্চাটির ডানা ও পালক গজিয়েছে বেশ ভালোই। সংশ্লিষ্টরা বাচ্চাটিকে গভীর নজরদারিতে রেখেছেন।

জানা যায়, মরুভূমির প্রাণী হলেও দীর্ঘদিন থেকে দিনাজপুরে পালন করা হচ্ছে উটপাখি। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির এই পাখিটির ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনে সাফল্য ধরা দিচ্ছিল না। জুন মাসের এক তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে ১৯টি ডিম বসানো হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ডিম থেকে বুধবার (১২ জুলাই) উটপাখির একটি বাচ্চা ফুটে বের হয়েছে। যার ওজন ছিল ৯৪৮ গ্রাম।

হাবিপ্রবিতে উটপাখি নিয়ে গবেষণা করা খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উটপাখি অনেক দ্রুত বর্ধনশীল একটি পাখি। এটি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। একটি গরুও বছরে ৯০ থেকে ১৩০ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এদের মাংস উৎপাদনের ক্যাপাসিটি অনেক বেশি। একটি গরু যে পরিমাণে বছরে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে একটি উটপাখি তার চেয়ে অনেক কম খাবার খায়। তাই এটি অনেক লাভজনক। প্রথমবারের মত আমরা ইনকিউবেটরের মাধ্যমে একটি উটপাখির বাচ্চা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছি। এটি আমাদের মাংসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

হাবিপ্রবির জেনেটিকস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষণা প্রধান ডা. কামরুজ্জামান মিঠু বলেন, উটপাখি মূলত মরুভূমি এলাকার পাখি। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়ানো ও ইনকিউবেটরে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে বাচ্চা ফোটানো অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর বাচ্চা ফোটানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো উর্বর ডিম পাওয়া। যেটি আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা সব প্রতিবন্ধকতা পার করে অবশেষে একটি বাচ্চা উৎপাদন করতে পেরেছি। এটি আমাদের জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিমাণে বাচ্চা উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে উটপাখির বাচ্চা পৌঁছে দিতে পারব।

উটপাখির খামারি সুলতান ইফতেখার ওয়ালী রেজা চৌধুরী বলেন, সখের বশেই আমি উটপাখিগুলো বাহির থেকে নিয়ে এসে পালন করতে থাকি। এক সময় পাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করে। তখন কীভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাব সেটা নিয়ে ভাবতে থাকি। পরে হাবিপ্রবির গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি তাদেরকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম দেই। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তারা ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। আমি এজন্য তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমরা যদি বৃহৎ পরিসরে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারি তাহলে যারা খামার করতে আগ্রহী এখান থেকে আমরা তাদেরকে বাচ্চা সাপ্লাই দিতে পারবো।

হাবিপ্রবির জেনেটিকস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর. ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, এই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম. এ গাফফার উটপাখির বাচ্চা এনে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এখন সকলের প্রচেষ্টায় ডিম থেকে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হয়েছি। ডিম ফোটানোর জন্য যেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে সমাধান করে বাচ্চা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আশা করছি ভবিষ্যতে উটপাখির চাষ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

হাবিপ্রবির ভেটেরিনারী অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. উম্মে সালমা বলেন, ইনকিউবেটরের মাধ্যমে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো এটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম ঘটনা। আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উটপাখির বাচ্চা নিয়ে এসে পালন করতে হতো। এর ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাওয়ানো কঠিন ছিল তেমনি খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হতো।  

তিনি আরও বলেন, দেশেই যদি ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারি তাহলে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোটা তুলনামূলক সহজ হবে। একই সঙ্গে বাচ্চা উৎপাদনের খরচও কমে যাবে। এতে যারা উটপাখির খামার করতে আগ্রহী তাদের জন্য অনেক সুবধিা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।