ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাড়ির হর্ন মুক্ত ১ মিনিটের শাহবাগ

স্টাফ করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
গাড়ির হর্ন মুক্ত ১ মিনিটের শাহবাগ

ঢাকা: রাজধানীর একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম। প্রতিদিন সকালে তার ঘুম ভাঙে ব্যস্ত নগরীর মহাসড়কের যানবাহনের শব্দে।

সেই গাড়ির হর্নগুলো এতটাই জোরালো যে, ঘুম ভাঙার পরও একটা অবসাদ থেকে যায় দীর্ঘক্ষণ। তার রেশ পড়ে সমগ্র দিনের কাজের উপর।

রোববার (১৫ অক্টোবর) সকালে ফাহিমের সঙ্গে কথা হয় শাহবাগে। মহাসড়কের পাশে স্কাউটের এই কর্মী দাঁড়িয়ে আছে একটি লাল প্লাকার্ড হাতে। তাতে লেখা- ‘শব্দ দূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি। ’

শব্দদূষণ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এক মিনিট ঢাকা শহরকে শব্দহীন করার নিমিত্তে কাজ শুরু করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। ‘শব্দদূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি’ প্রতিপাদ্যে রোববার (১৫ অক্টোবর) সকালে এ কর্মসূচি পালন করা হয় এবং ১০টা থেকে ১০টা ১ মিনিট পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থান হর্নমুক্ত করে নীরব রাখা হয়।

কর্মসূচি ঘিরে শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা ক্লাব পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্কাউট ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা যানবাহনে সচেতনতামূলক স্টিকার লাগিয়ে দেয়। এছাড়া গাড়ির চালকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে এবং মাইকিং করে ও প্লাকার্ড হাতে সকলকে হর্ন না বাজানোর জন্য সচেতন করে।

এসময় কথা হলে ফাহিম বলেন, ঢাকা শহর বাংলাদেশের রাজধানী এবং এটি একটি জনবহুল শহর। এখানে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে, শহরের রাস্তাঘাট, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি থেকে প্রচুর শব্দ দূষণ হচ্ছে। এই শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। শব্দ দূষণের কারণে মানুষ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরাও সম্মুখীন হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতির। সে জন্যই শব্দ দূষণ কমাতে সকলকে সচেতন করতেই এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ।

রোববার রাজধানীর ১০টি শব্দদূষণপূর্ণ স্থানে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন চালানো হয়। শব্দ সৃষ্টিকারীদের মধ্যে সচেতনতামূলক স্টিকার বিতরণ করা হয়। পরে ১০টা থেকে ১০টা এক মিনিট পর্যন্ত শব্দহীন রাখা হয় ওই স্থানগুলোকে।

গাড়িতে স্টিকার লাগানো এবং লিফলেট হাতে পেয়ে পড়ার পর দিশারী পরিবহনের চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা চালকরাও চাই হর্ন না দিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য। তবে সড়ক ব্যবস্থা, দীর্ঘ জানযট, একই সড়কে রিকশা-ভ্যান-সিএনজি, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার; এসবের মধ্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই হর্ন দিতে হয়। এভাবে সকলকে সচেতন করা গেলে সেটা সত্যিই অনেক ভালো হবে। আর আমি নিজেও চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব কম হর্ন দেওয়ার জন্য।

কর্মসূচি নিয়ে শাহবাগ থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মঞ্জুরুল আলম বলেন, আমরা সকলকে সচেতন করেছি এবং লিফলেট বিতরণ করেছি। সকলে তাতে সাড়াও দিয়েছে। তারা যত্রতত্র হার্ণ বাজায়, হাসপাতালের সামনে হর্ণ বাজায়; এটা তো ক্ষতিকর। এসব বিষয়েই তাদের সচেতন করা হয়েছে।

আর কর্মসূচি নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা-২) মোছাঃ মোহছিনা আকতার বানু বলেন, আমরা মনে করি আমরা আজকের কর্মসূচি সফল করেছি। একটা বিষয় তো হুট করে একদিনেই বদলে যাবে না, তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের কাজ শুরু এবং আমরা এটি নিয়মিতভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবো। আজ এক মিনিট শব্দমুক্ত রাখা হয়েছে, আগামীতে জনগণ আরও সচেতন হবে এবং ঢাকা শহরের শব্দ দূষণ কমে আসবে, এটাই প্রত্যাশা করি।

কর্মসূচি সফল করার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সব ধরনের পরিবহন ও নির্মাণ সমিতি, বিআরটিএ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, স্কাউটসহ সব ধরনের গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩

এইচএমএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।