ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্তরা। একই সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন ‘মায়ের কান্না ও অগ্নি-সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ শীর্ষক আলোচনা সভার বক্তারা।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে  ‘মায়ের কান্না ও অগ্নি-সন্ত্রাসের আর্তনাদ’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে এ দাবি করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এর বিচারের দাবিতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সংগঠিত হত্যা-নির্যাতন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, অবরোধে সংঘটিত অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুরের ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিহতদের পরিবারের সদস্য, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশ, অবরোধে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।  

বক্তব্যে অনেকই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি তারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান, যাতে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কেউ ঘটাতে সাহস না করে।

এ সময় সহিংসতায় আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বক্তব্যে দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। আহতরা তুলে ধরেন ঘটনার শিকার হওয়ার সময় ও পরবর্তী জীবনের বিভীষিকার কথা। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনহারানোর বেদনার কথাও বলেন। এ সময় মিলনায়তনের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে এবং হৃদয়বিদারক ও অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। প্রত্যেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেওয়া বক্তব্যে আর্তনাদ করেন। আহতরা বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে সশস্ত্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের বিচার, ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর অত্যাচার,নির্যাতন, হত্যা; ২০১৩,১৪,১৫ সালের অগ্নি-সন্ত্রাসের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পাভেজের ছোট্ট মেয়ে তানহা বক্তব্য রাখে।

তানহা তার বক্তব্যে বলে, আমি টাকা জমা করছি আমার বাবাকে কিনে আনবো। আমি বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আমিরুল ইসলামের স্ত্রী রুমা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, আমিরুলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা তার মুখটাও দেখতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আমিরুলকে যেভাবে মারা হয়েছে, ওদের তার চেয়েও যেনো কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার এই একটাই দাবি।

অনুষ্ঠানে গাইবান্ধায় শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হাজিদুল ইলাম জাহিদের বাবা আবুল হোসেন বলেন, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আমার ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে, পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে। আমার ছেলের অপরাধ সে আওয়ামী লীগ করতো, এই জন্যই তাকে হত্যা করে তারা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদন জানাই এদের বিচার যেনো নিশ্চিত হয়।

সম্প্রতি বিএনপির অবরোধ চলাকালে অছিম পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিলে বাসটির মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার আবু নাঈম পুড়ে মারা যান।  

অনুষ্ঠানে আবু নাঈমের মা বলেন, জামায়াত-বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারছে। আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর কঠিন বিচার চাই। জামায়াত-বিএনপি আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছে, তারা যাতে বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট কী, সেজন্য তাদের কঠিন বিচার চাই।

অনুষ্ঠানে মায়ের কান্না সংগঠনের সভাপতি কামরুজ্জামান লেলিন তার বক্তব্যে বলেন, জিয়াউর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে হত্যার শিকার তার বাবার কবর কোথায় সেটাও আমরা অনেক খুঁজেছি। আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে সেখানকার লোকদের কাছে জানতে পেরেছি, অনেক লাশ নিয়ে আসা হতো তখন, যাদের গোঙানোর শব্দ শোনা যেতো। ওইভাবে তাদের কবর দিতে নির্দেশ দেওয়া হতো। এই খুনি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি আমি।

সভা পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী এ আলোচনা সভা পরিচালনা করেন।  

এ সময় সেখানে উপস্থিতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এসকে/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।