ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আনিসুরের গাড়ি চালকই তার ছেলের অপহরণকারী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
আনিসুরের গাড়ি চালকই তার ছেলের অপহরণকারী

ঢাকা: ঢাকার একজন ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান। তার ছেলের নাম মো. জামিনুর রহমান (১১)।

তাকে স্কুলে আনা নেওয়া করতেন গাড়ি চালক কামরুল হাসান (২৮)। তিনি আবার অপহরণ চক্রের সদস্য। জামিনুরও তার দ্বারা ভুক্তভোগী।

অর্থাৎ, আনিসুরের ছেলে জামিনুরকে অপহরণ করেছিলেন কামরুল। তাকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

ডিবি জানায়, জামিনুর রহমান ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২০ মার্চ সকালে কামরুল হাসান তাকে স্কুলে নিয়ে যান। এ সময় সাত যুবক সেখানে এসে জামিনুরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর জামিনুরের পরিবারকে ফোন করে চক্রটি ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জামিনুরসহ গাড়ি চালক কামরুল হাসানকে ছাড়িয়ে আনে আনিসুর রহমানের পরিবার। কিন্তু তারা তখনও জানতেন না কামরুল হাসানও অপহরণকারীদের একজন।

জামিনুর ও কামরুলকে ছাড়িয়ে আনার পর গত ২০ মার্চ ধানমন্ডি থানায় মামলা করা হয়। ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। তদন্তের এক পর্যায়ে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপহরণের শিকার জামিনুর ও তার বাবা আনিসুর রহমানগ্রেপ্তার অন্যান্যরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ, মো. নূর আলম, মো. রনি মিয়া, মো. মনির হোসেন, মো. জনি বিশ্বাস ও মো. আসলাম হাওলাদার। রাজধানী, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার মাসুদ গাড়ি চালক কামরুল হাসানের দুলাভাই। তারা দুজন পরিকল্পনা করে জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে। দীর্ঘদিন পরিকল্পনার পর তারা এ অপহরণকাণ্ড ঘটান।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ২০ মার্চ সকাল সাতটায় জামিনুরকে অপহরণের সময় প্রথমে তিন যুবক আসে। পরে আরও চারজন তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। অপহরণের পর ভুক্তভোগীদের নিয়ে সাভারের গেন্ডা এলাকায় চলে যায় তারা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণকাণ্ডটি ঘটানো হয়। গাড়ি চালক কামরুল অপহরণ চক্রের একজন সদস্য।

তিনি বলেন, অপহরণের পর চক্রটির একজন জামিনুর রহমানের বাবা আনিসুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে ১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভুক্তভোগীর বাবাকে অপহরণকারীরা বলে, যদি এ ঘটনা পুলিশ বা অন্য কাউকে জানানো হয় তাহলে জামিনুর রহমানকে হত্যা করা হবে। এ হুমকির কারণে জামিনুরের বাবা ভয় পেয়ে মামলা করা থেকে বিরত থাকেন। পরে ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগীর চাচা হাবিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা রুজু করেন।

আনিসুর এতটাই ভয় পেয়েছিলেন, মামলা হওয়ার পরও তিনি পুলিশকে বলেন, আপনারা যাবেন না, আপনারা গেলে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে।

ডিবি প্রধান বলেন, ভুক্তভোগীর বাবার কথা মাথায় রেখে ‘আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়’ সেই চিন্তা করে আমরা প্রাথমিকভাবে যাইনি। পরে ঘটনার দিন রাত ১০টায় আনিসুর অপহরণকারীদের ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জামিনুর ও কামরুলকে ছাড়িয়ে আনেন। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল- মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও আমরা অপহরণকারীদের ছাড়ব না। এরপর ডিবি রমনা বিভাগ এ বিষয়ে কাজ শুরু করে। মুক্তিপণ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ অপহরণকারী চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, এই অপহরণের মূল হোতা হলেন গাড়ি চালক কামরুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ। সম্পর্কে মাসুদের শালা কামরুল হাসান। এরা দুজন মিলেই জামিনুরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। চক্রটি এর আগে একটি অপহরণ করে জেলে যায়। আবার জেল থেকে বের হয়ে অপহরণ কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন বড় লোক ব্যবসায়ীর গাড়ি চালক হিসেবে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়া ব্যবস্থা করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে আসছিল। অথবা বড় লোকের গাড়ি চালককে কৌশিলে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে। এই ঘটনায় জামিনুরের পরিবারের ড্রাইভার কামরুল নিজেই এ অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তার সহযোগিতা ও তার ভগ্নীপতি মামুনের পরিকল্পনায় এ অপহরণের ঘটনাটি ঘটে। আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।