ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যে হতাশার কথা জানালেন টাইগার বাইকের উদ্ভাবক ফারুক হোসেন

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৪
যে হতাশার কথা জানালেন টাইগার বাইকের উদ্ভাবক ফারুক হোসেন

সাতক্ষীরা: ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি, মোটর ও ডায়নামোর সাহায্যে চার চাকা বিশিষ্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব একটি গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন সাতক্ষীরার থানাঘাটা গ্রামের শেখ ফারুক হোসেন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের আদলে তৈরি এই গাড়ির নাম দেন তিনি টাইগার বাইক।

টাইগার বাইকে একত্রে ১২ জনকে বহন করা সম্ভব। যা চলতে লাগে না বিদ্যুৎ বা জ্বালানি। মূলত ডায়নামোর সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই চলে এই গাড়ি।

প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত টাইগার বাইক বাজারে বিদ্যমান ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের তুলনায় বেশ উন্নত। বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে গাড়িটি তৈরি করলেও আর্থিক সংকটে তা সম্প্রসারণে ব্যর্থ হয়েছেন এর উদ্ভাবক শেখ ফারুক হোসেন। একই সঙ্গে তিনি হয়ে পড়েছেন হতাশ।  

জানা যায়, শুধু টাইগার বাইক নয়, শেখ ফারুক হোসেন সাতক্ষীরাকে পলিথিনমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে তৈরি করেছিলেন বর্জ্য পলিথিন দিয়ে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের প্লান্ট। এর খবর পেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, উদ্ভাবক ফারুক হোসেনকে ডেকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। এবং প্লান্টটি সম্প্রসারণে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে মোতাবেক কাজও এগিয়েছিল বেশ। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রয়োজন হওয়ায় ফারুক হোসেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে লাইসেন্সের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স পাননি।

শেখ ফারুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মেধার কোনো দাম নেই। আমরা সব সময় আমদানি নির্ভর পণ্য ও গাড়ি ব্যবহারে অভ্যস্ত। আবার গাড়ি (ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক) বাজারে বিক্রি করলে সমস্যা নেই, কিনে রাস্তায় চালালে পুলিশে ধরে। আমদানিকৃত এসব গাড়ি চালাতে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল লাগে। যা সরকার ভর্তুকি মূল্যে আমাদের দেয়। এসব কথা চিন্তা করেই পরিবেশ বান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী টাইগার বাইকটি বানিয়ে ছিলাম। গাড়িটি নিজে ডায়নামোর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজেই চলে। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের মতো জাতীয় সম্পদ সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু এসব নিয়ে সরকার বা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। তারা ব্যস্ত বিদেশের মাল আমদানি করতে। বিদেশি প্রযুক্তি ভাড়া করতে। তাই আমিও আর চেষ্টা করিনি। আর্থিক সংকটে পড়ে ব্যাটারি বিক্রি করে দিয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, প্রথমে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন খুবই উৎসাহ দিয়েছিল। লাইসেন্সের টাকা জমা দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বদলি হয়ে যান। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একজন সহকারী জানালো ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তাহলে লাইসেন্স হবে। তারা একবারের জন্য আমার প্লান্ট দেখতেও আসেনি। টাকা না দেওয়ায় লাইসেন্স হলো না। আমার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

শেখ ফারুক বলেন, বর্জ্য পলিথিন দিয়ে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের প্লান্টটি চালু করা গেলে একদিকে যেমন, পরিবেশ পলিথিনমুক্ত করা সম্ভব হতো। তেমনি আমদানি নির্ভর পেট্রোল ও ডিজেলের উপর চাপ কম পড়তো। কিন্তু আমাদের কর্মকর্তারা তো আমদানি করতেই পছন্দ করেন। প্রকৃতপক্ষে পরিবহন, বিদ্যুৎ, খনিজ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই এসব উদ্যোগ দেশের কাজে আসতে পারে।

ফারুক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেধার মূল্যায়ন হলে দেশ আরও এগিয়ে যেত। সম্পদের ঘাটতি হতো না।  

সাতক্ষীরায় তুষ কাঠ (পাইপ কাঠ), মেলামাইন বোর্ড ফার্নিচার, পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টসহ অনেক কিছুরই প্রচলন হয়েছে ফারুক হোসেনের হাত ধরেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।