ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আসামিপক্ষকে উচিত শিক্ষা দিতে জমির ধান কাটতে দিচ্ছে না বাদীপক্ষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৪
আসামিপক্ষকে উচিত শিক্ষা দিতে জমির ধান কাটতে দিচ্ছে না বাদীপক্ষ

মাদারীপুর: মাদারীপুরে হত্যা মামলার আসামিদের উচিত শিক্ষা দিতে জমির ধান কাটতে বাদীপক্ষের লোকজন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

মামলার কারণে এলাকা পুরুষশূন্য থাকায় নারীরা ধান কাটতে গেলেও  লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে।

 

এতে জমির পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতেই। প্রচণ্ড রোদে পুড়েও যাচ্ছে।

চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা এসব কৃষকের পরিবারের।  

মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকায় ঘটছে এমন ঘটনা।  

জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ নিজস্ব একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পিকনিকে গেলে গাড়িতে সামনে বসা নিয়ে ওই এলাকার মিল্টন হালদার ও প্রকাশ বৈরাগীর ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে হালদার ও বৈরাগী বংশের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাধিকা হালদারকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪দিন পর মারা যান তিনি। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মিতালী হালদার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৪০ জনের নামে একটি মামলা করেন।

কাটতে না দেওয়ায় শত শত বিঘার ধান জমিতেই নষ্ট হচ্ছে

এই মামলার জেরে আসামিপক্ষের পুরুষ সদস্যরা ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। ওদিকে কৃষক পরিবারের বিঘার পর বিঘা জমির ধান পাকলেও কোনোভাবেই কেটে ঘরে তুলতে পারছে না আসামিপক্ষের লোকজন। ধান কাটতে না পারায় কৃষক পরিবারের নারী সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার রাধিকা হালদার হত্যাকাণ্ডের জেরে বাড়িছাড়া আসামিপক্ষ। তাদের কয়েকশ’ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বেরো ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। এমনকি, শ্রমিক দিয়েও ধান কাটতে গেলে আসছে একের পর এক বাধা। এতে দিশেহারা কৃষকদের পরিবার।  

আসামিপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমিতে ধান কাটতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের লোকজনের।

কৃষক সুকুমার ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী জানান, একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবার ও বংশের ভাই, বোন ও স্বামীকে আসামি করা হয়েছে। সবাই পলাতক। চাষ করা জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে, আমরা নারীরা জমিতে ধান কাটতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর বাদীপক্ষ হামলা চালায়। এই ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারাবছর না খেয়ে মরতে হবে।

প্রলাদ মণ্ডলের স্ত্রী বিনা রানী মণ্ডল বলেন, আমার স্বামী, দেবর ও ভাশুর সবাই বাড়িছাড়া। আমাদের পরিবারের লোকজন জমিতে চাষ করে গেছে, সেই জমিতে এখন ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। ধান কাটতে গেলে বাদীপক্ষ হামলা চালায়, পরে ভয়ে জমি থেকে উঠে চলে যাই।

দিলীপ বৈরাগীর স্ত্রী চম্পা বৈরাগী বলেন, বছরে একবার জমিতে ধান হয়। এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখন বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা নেই।  ধান কাটতে গেলে বাদীপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। আমাদের ধাওয়া দিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।

রাধিকা হালদারের ভাইয়ের ছেলে বিল্পব হালদার বলেন, আসামিদের পরিবারের কটূক্তিমূলক কথার কারণেই ধান কাটতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। জমির ধান জমিতেই থাকবে। অন্য কেউ ধান কাটতে পারবে না।

নিহত রাধিকা হালদারের পুত্রবধূ লক্ষ্মী রানী হালদার বলেন, আসামিদের পরিবারের নারী সদস্যরা অনেক গালিগালাজ করে, তাই ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছে না। মামলার আসামি যারা, তারা সরাসরি ধান কেটে নিয়ে যাক, অন্যকেউ ধান কাটতে আসলে এমনই হবে।

পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার ধানক্ষেতের ব্লক ম্যানেজার কামাল মাতুব্বর বলেন, পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকায় মারামারিতে একজন লোক মারা গেছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামিও আছে। তারা সবাই পলাতক। বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছেন। এই আসামিপক্ষের জমিতে ধান পেকে গেছে, কিন্তু বাদীপক্ষের লোকজন ধান কাটতে দিচ্ছে না। ৩-৪ দিনের মধ্যে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে কৃষকদের পরিবারের।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, জমিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধা দেওয়া সেটাও আরেকটি অপরাধ। ধান কেটে নেওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ধান পেকে জমিতে নষ্ট হচ্ছে, সেই ধান কাটতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এজন্য কৃষকের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।