ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মিল্টন সমাদ্দারের নামে তিন মামলায় যেসব অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৪
মিল্টন সমাদ্দারের নামে তিন মামলায় যেসব অভিযোগ

ঢাকা: মানবসেবার নামে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে অপরাধে জড়ানো মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। সব মামলাই রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় করা হয়েছে।

এরমধ্যে একটি পুলিশ বাদী হয়ে, অন্য দুটি দুইজন ভুক্তভোগী করেছেন। এতে প্রতারণা, মানবপাচার, নির্যাতনসহ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে।

এম রাকিব নামে একজন তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা থানাধীন ভয়েস স্কুল সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে দুই বছরের শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি মিল্টন সমাদ্দারকে ফোনকলে সেখানে ডেকে নেন। মিল্টন শিশুটিকে উদ্ধার করে তার প্রতিষ্ঠানে (চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার) নিয়ে যান। এদিন রাকিব তার সঙ্গে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানে যান এবং ১০ হাজার টাকা দেন। প্রায়ই শিশুটিকে রাকিব সেখানে দেখতে যেতেন। হঠাৎ পাঁচ-ছয় মাস পর মিল্টন তাকে ফোনকলে হুমকি দেন এবং বলেন, তিনি যেন শিশুটিকে দেখতে তার প্রতিষ্ঠানে না আসেন। যদি আসেন তাহলে তার ক্ষতি করা হবে। পরের বছরের (২০২১ সাল) জুন মাসে ওই শিশুকে কোথাও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে খোঁজ পান রাকিব। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হলে রাকিবের নজরে আসে এবং মিরপুর মডেল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। এতে মিল্টন সমাদ্দারের নাম উল্লেখ করে তিনি অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করেছেন।

মতিউর রহমান মল্লিক নামে একজন দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি ২০২১ সালের ৩ মার্চ মিরপুর-১ নম্বরের দক্ষিণ বিছিলের রাস্তায় একজন অন্ধ ব্যক্তি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে দারুস সালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য মিল্টনের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরের দিন তিনি জানতে পারেন ওই ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার সন্দেহ হলে তিনি ৪ মার্চ মিল্টনের প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় মিল্টন, তার স্ত্রীসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে মতিউর রহমান মল্লিককে মারধর করে আটকে রাখেন। তিনি ঘটনার সময়ের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করলে তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আর অন্ধ লোককে উদ্ধারের পর যে জিডি করেছিলেন সেটিও কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অনেক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে তিনি সেদিন ছাড়া পান। গতকাল বুধবার (১ মে) ডিবি পুলিশের অভিযানে মিল্টন সমাদ্দার আটক হলে আজ বৃহস্পতিবার তিনি মিরপুর থানায় মামলা করেন।

আর পুলিশের মামলায় প্রতারণার মাধ্যমে মৃত্যু সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। অভিযোগ উঠেছে, সেখানে নিজের বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়েন মিল্টন। অভাব-অনটনের সংসারে একসময় বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে একটি দোকানে ওষুধ বিক্রি করতেন। সেখান থেকে তার উত্থান। আশ্রমে কুড়িয়ে আনা সাধারণ মানুষের শরীরের কিডনি, বিভিন্ন অঙ্গ-পতঙ্গ বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া অসহায় মানুষকে লালন-পালনের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে সহায়তা পেতেন, যা দিয়ে তিনি বিলাসী জীবন-যাপন করতেন। কেউ তার এসব ঘটনার প্রকাশ করতে চাইলে টর্চার সেলে মারধরের অভিযোগও মিলেছে।

গ্রেপ্তারের পর আজ তাকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এদিন দুপুরে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানান, রিমান্ডে নেওয়ার পর তার সব অপকর্ম তদন্ত করে বের করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে তার স্ত্রীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর যদি কেউ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে তার স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলো মিল্টন অস্বীকার করতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২৪
এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।