ঢাকা: গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা এতটাই প্রকট যে সারাবিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের জন্য আকুতি করছে ফিলিস্তিনিরা। দেশটির মজলুম বাসিন্দারা বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার (৬ এপ্রিল) এক ফেসবুকে পোস্টে মার্চ ফর গাজার ডাক দেন তিনি। সেখানে ‘বাংলাদেশ ফর গাজা’ বার্তাটিও দেন সারজিস।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘Global strike for Ga'za.
7th April.
আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে আমাদের মজলুম গাজাবাসী ভাইবোনেরা। গণহত্যা বন্ধ করার দাবিতে বিশ্বের সকল দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস, আদালত সব বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
কিন্তু মানুষ কিংবা মুসলিম হিসেবে এসব বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দল মত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র জনতা একসাথে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাইদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারব।
NCP, BNP, জামায়াত; কিংবা অন্য কোনো দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে "বাংলাদেশ" ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি।
প্রত্যেক জেলায় ছাত্র জনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
March for Gaza.
Bangladesh for Gaza.’
এদিকে, গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ১৭ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম বিশেষজ্ঞ এক বিরল ধর্মীয় ফরমান বা ফতোয়া জারি করেছেন। তারা সমস্ত মুসলিম ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিশরীয় ইসলামী পণ্ডিত ইউসুফ আল-কারাদভীর নেতৃত্বাধীন ইসলামি সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারসের (আইইউএমএস) মহাসচিব ও প্রভাবশালী কুর্দি সুন্নি ইসলাম পণ্ডিত শেখ আলী আল-কারাদাঘি গত শুক্রবার সমস্ত মুসলিম দেশকে তাদের ম্যান্ডেট অনুসারে ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে অবিলম্বে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান।
শেখ আলী আল-কারাদাঘি শরিয়া ও ফিকাহ এবং ইসলামী অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ। তিনি দোহার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের আইনশাস্ত্রের অধ্যাপক। ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে তিনি প্রায় ১৫ দফা ফরমান বা ফতোয়া জারি করেছেন।
ফতোয়ায় আলী আল-কারাদাঘি বলেন, গাজা ধ্বংস হওয়ার সময় আরব ও ইসলামি সরকারগুলোর সমর্থন দেওয়ার ব্যর্থতা ইসলামী আইন অনুসারে সেখানকার নির্যাতিত মানুষদের প্রতি বড় অন্যায়। গাজার মুসলমানদের নির্মূলের চেষ্টা করা কাফের শত্রু ইসরায়েলকে সমর্থন করা নিষিদ্ধ, তা সে যে ধরণের সমর্থনই করুক না কেন। ইসরায়েলিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা নিষিদ্ধ। সুয়েজ খাল, বাব আল-মান্দাব, হরমুজ প্রণালী, অথবা অন্য কোনো স্থল, সমুদ্র বা আকাশপথের মতো বন্দর বা আন্তর্জাতিক জলপথ দিয়ে তাদের জন্য অস্ত্র পরিবহন সহজতর করা নিষিদ্ধ।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস যে ফতোয়া জারি করেছে, সেটিতে গাজার মুসলিমদের সমর্থনে দখলদার শত্রুর (ইসরায়েল) জন্য আকাশ, স্থল ও সমুদ্র অবরোধের দাবি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফরমান বা ফতোয়া হলো ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী একজন সম্মানিত ব্যক্তির দেওয়া বাধ্যতামূলক ইসলামী আইনি রায়। এটি সাধারণত কুরআন বা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী ও ইসলামী অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়। ফতোয়ায় আলী আল-কারাদাঘি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সম্মানিত ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের একজন। তার ফতোয়াগুলো পৃথিবীর ১৭০ কোটি সুন্নি মুসলিমের কাছে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।
কারাদাঘির ফতোয়াকে সমর্থন জানিয়েছেন আরও ১৪ জন ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। তারা যেসব মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের ‘শান্তি চুক্তি’ আছে সেগুলো যেন পুনর্বিবেচনা বা পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন। একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগ্রাসন নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে বাধ্য করতে মার্কিন মুসলিমদেরকে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি ও অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কথা বলেন ট্রাম্প। কিন্তু গত মাসে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ফের যুদ্ধ শুরু করতে ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দেখান তিনি। যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করার পর থেকে ইসরায়েল শত শত শিশুসহ এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
এমজে