ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাটুরিয়ায় নদীর পাড় দখল করে মার্কেট নির্মাণ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
সাটুরিয়ায় নদীর পাড় দখল করে মার্কেট নির্মাণ 

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার গাজীখালী নদীর পাড়ে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে কাউছার ও রোমান গং নামে দুই ব্যক্তি বিরুদ্ধে।  

বিগত স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমতা ইউনিয়নের মূল দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাউছার আলমের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন।

তার একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণেই সরকারি নদীর পাড় দখল করতে দুঃসাহস দেখাতে পেরেছেন কাউছার আলম- এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ম্যাপ অনুসারে মানিকগঞ্জ জেলার সীমানা নির্ধারণ হয়েছে কোনো না কোনো নদী দ্বারা। প্রতিটি উপজেলার মতোই সাটুরিয়ার ওপর দিয়ে ধলেশ্বরী ও গাজীখালী দুটি নদী বয়ে গেছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী বালিয়াটি ও ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে গাজীখালী নদী বয়ে গেছে। নদীর পূর্ব পাশে ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউছার আলম সরকারি সম্পত্তির ওপর বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পরপর তড়িঘড়ি করে মার্কেট নির্মাণ করেন কাউছার আলম। সরকারি সম্পত্তির ওপর অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণে বাধা দিতে চাইলে পুলিশের ভয় ছিল বলে অনেকেই এই দুঃসাহস দেখায়নি। স্বৈরশাসকের পতন হলেও আমতা ইউনিয়নের বিএনপির একাংশের মৌন সমর্থনেই এই মার্কেট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের এই অবৈধ মার্কেট নির্মাণ দেখে ওই স্থান থেকে মাত্র ৫০ ফুট দূরে আরও একটি মার্কেট নির্মাণ করছেন রোমান নামের আরও এক ব্যক্তি। এই ভাবে মার্কেট নির্মাণে নদী যেমন ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে ঠিক একইভাবে নদীর পানির গতিপথে বাধা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর পাড় দখলমুক্তসহ নদীর পানি যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এটাই দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় ও বিএনপির একাধিক ব্যক্তি নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেলোয়ার হোসেন অনেক নিরীহ মানুষ ও ভূমিহীনদের ওপর অত্যাচার করেছেন। তাদের এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করলে পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হত বিধায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে টু-শব্দ করতে সাহস দেখায়নি। আওয়ামী সরকারের পতন হলেও তাদের ক্ষমতা যেন কোনো অংশেই কমে নাই। স্থানীয় বিএনপির সহায়তা ও মৌন সমর্থনের কারণে নদীর পাড় দখল করে বাণিজ্যিকভাবে মার্কেট নির্মাণ করেছেন দেলোয়ারের ছোট ভাই কাউছার আলম। নদীর ওপর মার্কেট নির্মাণের কারণে বর্ষার সময় পানির গতিপথের পরিবর্তন হতে পারে। কোনো কারণে যদি নদীর পানি প্রবাহের পরিবর্তন হয় তবে সরকারি রাস্তাসহ বসত বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। এই কারণে অবৈধভাবে যে-সব মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে, ওই সব অবৈধ স্থাপনা দ্রুত অবমুক্ত করতে হবে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।   

আমতা ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের আমলে কাউছার আলমের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন আমতা ইউনিয়নে। ওই সময়টাতে তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। তাদের পরিবারের দাপটে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অন্যায় অত্যাচার মুখ-বুঝে সহ্য করেছে। সেই ভাব এখনো যায়নি তাদের। দেলোয়ারের ভাই কাউছার সরকারি সম্পত্তি দখল করে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করছে এটা দুঃখজনক বিষয়। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, নদীর পাড় দখলমুক্তসহ নদীর পানির গতিপথ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়টি তারা দেখবে।     

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমতা ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাই কাউছার আলম যেখানে মার্কেট নির্মাণ করেছে সেটা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, এটা অনেকবার মাপের মাধ্যমে দেখা গেছে। সরকারি যে রাস্তা দেখছেন এটাও আমাদের সম্পদের ওপর দিয়ে গেছে। নদীর মাঝ পর্যন্ত আমাদের বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গাজীখালী নদী দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন কাউছার আলম এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন, আমার বাড়ির পাশে বিধায় আমি মার্কেট নির্মাণ করেছি এখানে, মার্কেটে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মার্কেট করার মূল কারণ হলো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা, আমার এই মার্কেটে ব্যবসা করে তারা স্বাবলম্বী হবে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, কোনো নিউজ করতে হবে না, আমি আপনাদের বিষয়টি দেখছি বলে মিষ্টি খাওয়ার জন্য উৎকোচের প্রস্তাব দেন। তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিস থেকে লোকজন এসেছিল তাদের বিষয়ও দেখেছি।  

নদীর পাড় দখল করে আরেক মার্কেট নির্মাণকারী রোমান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

সাটুরিয়ার বালিয়াটি ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় নদীর পাড় দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছে কাউছার আলম নামের এক ব্যক্তি। যেহেতু নদী পাড়ের এলাকা সেজন্য এরিয়াটা আমার না আমতা ইউনিয়নের সেটা অস্পষ্ট।

আমতা ইউনিয়নের দায়িত্বরত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দিপংকর চন্দ্র বলেন, যদি কেউ সরকারি সম্পত্তির ওপর অবৈধভাবে কোনো ধরনের মার্কেট বা স্থাপনা নির্মাণ করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।