বাগেরহাট: বনবিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের রাতভর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকার আগুন।
তবে ঘটনাস্থল থেকে ওড়ানো ড্রোনে এক কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের গুলিশাখালী এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।
তিন-চারটি স্পটে বিক্ষিপ্তভাবে ধোঁয়া দেখার কথা নিশ্চিত করেছেন বনবিভাগের এক কর্মকর্তা। সেখানে দ্রুত ধোঁয়া বাড়ছে বলে জানান তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বন অফিসগুলোকে ঘটনাস্থলের দিকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিল এলাকায় ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা বনবিভাগকে জানান। দুপুর থেকে বনবিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন আগুন নেভাতে শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ার লাইন কাটা শেষ করে বনবিভাগ। সন্ধ্যার আগে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গেলেও পানি দিতে পারেনি। পানির উৎস দূরে হওয়াতে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।
শনিবার রাত ৯টা থেকে বনবিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া শুরু করে জানিয়ে ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, বিকেলের আগেই আমরা ফায়ার লাইন কাটা শেষ করি। বনবিভাগের পাম্প ও পাইপলাইনও স্থাপন করি। তবে আগুনের এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে পাইপ ধার করে সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ শুরু করি। পাইপ দিয়ে রাত ৯টায় পানি ছেটানো শুরু করে বনবিভাগ। অর্ধশতাধিক বনবিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের রাতভর চেষ্টায় ভোর ৪টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে শনিবার দুপুর থেকে শত শত বনরক্ষী ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে কোদালের সাহায্যে ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি কলসি, বালতিতে করে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন।
এদিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দাস ও কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ নিয়ে মোট পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন সংলগ্ন ভোলা নদীর তীরে অবস্থান করছে। বনবিভাগের নিজস্ব সেচ পাম্প দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সুন্দরবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে, সেখান থেকে ভোলা নদীর দূরত্ব অন্তত তিন কিলোমিটার। এতো দূর থেকে পানি নিয়ে তা দিয়ে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, শনিবার দুপুর একটা নাগাদ বনকর্মীরা চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখার পর বনকর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নেভাতে শুরু করেন। এ এলাকার আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। আমাদের নিজস্ব সেচ পাম্প দিয়ে আগুন নেভাচ্ছি। রোববার ভোর পর্যন্ত আমরা আগুন নেভানোর কাজ করি। যেখানেই ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছি, সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে।
গত বছর ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগে। তাতে বনের পাঁচ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৬ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যার প্রায় সবগুলোই ভোলা নদী পার্শ্ববর্তী বনের উঁচু এলাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৫
এসআই