চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন তার বাসায় দায়িত্ব পালন করা দুই গৃহকর্মী। তাঁর এক বছরের সন্তানকে খাবার খাওয়ানোর ঘটনা কেন্দ্র করে মারধর করার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার।
একইসাথে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে ১ মাসের বেতন না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন আরেক গৃহকর্মী শিরিন।
তারা পরীমণির বাসার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৫ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা।
গৃহকর্মী পিংকি আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাদের এজেন্সির মাধ্যমে চিত্রনায়িকা পরীমণির বাসায় কাজ নিই। কাজ ছিল একজন বাচ্চার দেখাশোনা করা। তবে তাকে বাচ্চার দেখাশোনার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও, বাসার অন্য কাজও করানো হতো।
তিনি জানান, ২ এপ্রিল তিনি পরীমণির বাসায় তার বাচ্চাটিকে বসিয়ে বাজারের লিস্ট করছিলেন। এ সময় বাচ্চাটি কান্না শুরু করে। এর মধ্যে কান্না শুনে পরীমনির কাছে আসা সৌরভ নামের এক ব্যক্তি আমাকে বলেন বাচ্চাটাকে একটু সলিড খাবার দাও।
এর জবাবে বলেছিলাম, কিছুক্ষণ আগে সলিড খাবার খেয়েছে; দুই ঘণ্টা হয়নি এখনো। কাজ শেষ করে তারপর তাকে দুধ খাওয়াবেন।
পিংকি আরও বলেন, আমার আগে যে গৃহকর্মী ছিলেন, তিনিও বাচ্চা কান্না করলে মাঝেমধ্যে দুধ দিতেন। এই কথা বলে আমি বাচ্চাটার জন্য দুধ রেডি করছিলাম। এরই মধ্যে পরীমনি মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন যে আমি কেন বাচ্চার জন্য দুধ নিয়েছি।
এক পর্যায়ে তিনি আমাকে থাপ্পড় দিতে থাকেন এবং মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে থাকেন। মারধরের পর আমি জোরে জোরে কান্না করতে থাকি এবং তাকে বলি, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তিনি আমাকে বলেন, তুই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না। তোকে এখানেই মারব এবং এখানেই চিকিৎসা করব।
এই কথা বলে তিনি আবার আমাকে মারতে আসেন। তখন সৌরভ তাকে বাধা দেন। সৌরভ কেন বাধা দিলেন, এই কারণে পরীমনি তাকেও গালাগাল করেন।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন বাসার আরেকজন গৃহকর্মী বৃষ্টিকে আমি বলি আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।
বৃষ্টি আমাকে বলেন, পরীমনি ঘুমিয়েছেন, তাকে এখন ডিস্টার্ব করা যাবে না। তখন আমি বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে এজেন্সির কাদের ভাইকে ফোন দিয়ে তাকে পুরো ঘটনা জানাই এবং সাহায্য চাই তিনি যেন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তিনিও আমাকে সাহায্য করেন নি। উলটো ২ দিন পর পরীকে অন্য একজন গৃহকর্মী দিয়ে এসেছেন। আমি বাধ্য হয়ে পরে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করি এবং পুলিশকে জানাই যেন তারা আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে পুলিশ আসে পরীমনির বাসার সামনে। এসব ঘটনা পরীমনি জানার পর তিনি গৃহকর্মী বৃষ্টিকে বলেন আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। পরে বৃষ্টি আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দেন। আমি তখন রিকশা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই এবং প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অভিযোগ দেই। এখন সে আমার বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।
পরীমনির বাসায় কাজ করা আরেক গৃহকর্মী শিরিন অভিযোগ করে জানান, পরীমনি আমার এক মাস চার দিনের বেতন বকেয়া রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আমার আগেও ২ জনের সাথে একই কাজ করেছে পরী।
এ সময় তারা দুজনেই ৩ দফা দাবি জানান: ১.পরীমনির বাসার সিসিটিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার; ২. দেশের সকল গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে; ৩. প্রবাসী গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
এফএইচ/এমএম