ঢাকা: নরডিক দেশ ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি) গত ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছেন। সফরকালে তারা এই অঞ্চলের টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) ঢাকার ইউএনডিপি অফিস জানায়, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলারের নেতৃত্বে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মোলার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এদের মাঝে ছিলেন আদিবাসী সম্প্রদায়, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, নারী কমিটি এবং যুব সম্প্রদায়। এই সফরে ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগ এবং নরডিক দেশগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর পরিদর্শন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু সহিষ্ণুতা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং জীবিকা উন্নয়নভিত্তিক প্রকল্পসমূহ।
‘ডেনমার্ক পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে এবং এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন দেখতে পেয়ে গর্বিত,’ বলেন ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মোলার।
তিনি বলেন, যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবে আমরা ইকো-টুরিজম এবং কৃষির মতো খাতে টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি, যা এই অঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। ডেনমার্ক জলবায়ু অভিযোজন, টেকসই কৃষি এবং আদিবাসী জনগণের অধিকার রক্ষায় একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সফরকালে তারা রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার কিছু গ্রাম পরিদর্শন করেন, যেখানে তারা নারী নেতৃত্বাধীন জলবায়ু সহিষ্ণুতা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, সৌরশক্তি দ্বারা চালিত স্কুল পরিবহন ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণ, বিশেষত নারীদের নিজেদের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি যা অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পানির সংকট এবং শিক্ষার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের সংগ্রাম সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ে সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি যাদের প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ সেবা পার্বত্য চট্রগ্রামের মানুষদের নিরাপদ এবং শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামে চার দিন কাটানো এবং এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারাটা ছিল এক বিশেষ অভিজ্ঞতা,’ বলেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলের জনগণ যেভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে এবং উন্নয়নের ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সুইডেন এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপির সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পেরে গর্বিত, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু সহনশীলতা ও জেন্ডার সমতার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের এ যৌথ সফরটি, এই অঞ্চলে আমাদের অনেকদিনের একসঙ্গে কাজ করার সুফল মনে করিয়ে দেয়। নরডিক দেশগুলোর সহায়তায় গত ২০ বছর ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে এই অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে একযোগে কাজ করছি।
টিআর/এইচএ/